চ্যাংদোলা করে ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার, বিএনপির অবস্থান পণ্ড
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলটির অবস্থান কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এ কর্মসূচি শুরু হয়।
১১টা ৪০ মিনিটের দিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে নিয়ে যেতে চাইলে শুরু হয় হট্টগোল। নেতাকর্মীরা তাঁকে জাপটে ধরে রাখেন। টানাহেচড়ায় তাঁর জামা ও ভেতরের গেঞ্জি ছিড়ে যায়। গ্রেপ্তার এড়াতে একপর্যায়ে রাজ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জাপটে ধরেন। তবু ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যান।
দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের বাধার মুখে বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মসূচিস্থল ছেড়ে চলে যান।
এদিকে, পুলিশি বাধায় কর্মসূচি সফল করতে না পারায় বক্তব্য দিতে পারেননি কর্মসূচির সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের কর্মসূচিতে হানা দেয়। নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যায়। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা পুলিশের অনুমতি নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করতে প্রেসক্লাবে জড়ো হয়েছি। কিন্তু কর্মসূচি চলাকালীন বিনা কারণে তা পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। বারবার অনুরোধ করার পরও তারা আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি।’
অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন।
২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমদ।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে শুধু খালেদা জিয়াকে হেয় করতে তাঁকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। টাকা আত্মসাতের সাথে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নাই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য সরকার জাল-জালিয়াতির এ মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে।’
এ সময় মওদুদ আহমদ আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে এবং সাথে সাথে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ ব্যালটের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের অপশাসনের পতন ঘটাতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, গণতন্ত্র মুক্ত হবে। বিএনপি ও ২০ দলসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তি মাঠে নেমে এলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র পাল্টে যাবে।’
এদিকে ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান রাজকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর এটি বিএনপির পঞ্চম দফা কর্মসূচি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।
ছাত্রদলের নিন্দা :
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে গ্রেপ্তার করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ।
আজ এক বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি থেকে মিজানুর রহমান রাজকে বিএনপির জাতীয় নেতাদের সামনে থেকে বর্বরোচিত ভাবে টেনে-হিচরে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হলো আমরা কোনো পরাধীন দেশে বাস করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্লজ্জ ও সন্ত্রাসী তাণ্ডবের বিভীষিকাময় পরিবেশ তৈরি করে একের পর এক ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করছে। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধী দলের আইনানুগ, ন্যায়সঙ্গত কর্মসূচি নৃশংস প্রতিহিংসায় দমন করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে।’
নেতরা আরো বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত মিজানুর রহমান রাজ সময়ের সাহসী ছাত্রনেতা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তাঁর সাহসী ভূমিকার কারণে সরকার পরিকল্পিতভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দুই নেতা অবিলম্বে মিজানুর রহমান রাজসহ গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবি জানান।