পাবনায় সন্ন্যাসীকে হত্যা, বোরকাধারীদের খোঁজে পুলিশ
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় বৃদ্ধ সন্ন্যাসী হারাধন ভট্টাচার্য হত্যার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও আটক করা হয়নি কাউকে। তবে টাকা ও সম্পত্তির জন্যই এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
একই সঙ্গে প্রতিবেশীদের বর্ণনা অনুযায়ী বোরকাধারী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেন পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর।
তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেন পুলিশ সুপার। ঘটনার আগে নিহতের বাড়িতে যাওয়া বোরকাধারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
জিহাদুল কবীর বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ খুব সূক্ষ্মভাবে এগুচ্ছে। কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে আমরা খেয়াল রাখছি। তাই এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড রহস্যজনক। ৭০ বছরের শারীরিকভাবে দুর্বল একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষকে যেভাবে আঁটসাঁট করে হাত-পা বাঁধা হয়েছে তাতে এমনিতেই মারা যাওয়ার কথা। এরপর শ্বাসরোধ করে হত্যা। তাই বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে।’
জিহাদুল কবীর আরো বলেন, হারাধন সন্ন্যাসী ব্যক্তিগত জীবনে চিরকুমার। তিনি কবিরাজি করতেন। কোনো কোনো সময় মন্দিরে পুরোহিতের কাজও করতেন। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক দরিদ্র মানুষ চিকিৎসার জন্য তাঁর কাছে আসত। তবে তিনি যৌন রোগের ভালো চিকিৎসক ছিলেন বলে এলাকার মানুষজন জানিয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘হারাধন ভট্টাচার্যের জমানো অনেক টাকা-পয়সা ছিল। এ ছাড়া ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহরের শেষ সীমানায় প্রায় ২০ বিঘা জমিও ছিল তাঁর। তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘাতকরা তাঁর শোয়ার ঘর তছনছ করে। এরপর আলমারি থেকে জমির সব দলিল, টাকা-পয়সা ও স্বর্ণ নিয়ে যায়। এতে মনে হয় জমির দলিল এবং টাকা-পয়সা নিতেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।’
এদিকে, হারাধন ভট্টাচার্যের মতো এত বয়স্ক আর পরোপকারীকে হত্যার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে।
হত্যাকাণ্ডের ৩০ ঘণ্টা পরও কোনো ক্লু না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অজয় দাস বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে আমরা আতঙ্কিত ও ভীত। অবিলম্বে এই হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হোক।’
ঘটনা যাতে ভিন্ন খাতে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন পাবনা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি চন্দন চক্রবর্তী ।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হারাধন ভট্টাচার্যের নিজ বাড়ির শোয়ার ঘর থেকে তাঁর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি চিরকুমার এবং সন্ন্যাস জীবন যাপন করতেন এবং কবিরাজী পেশার সঙ্গে নিয়োজিত ছিলেন। এক সময় তিনি স্থানীয় মন্দিরে পুরোহিতের কাজও করতেন। তাঁর মৃত্যুর আগে ঘরে কয়েকজন বোরকাপরা ব্যক্তিকে ঢুকতে দেখেছে বলে জানায় নিহতের প্রতিবেশীরা।