ভৈরবে সংঘর্ষ, দেড় হাজার লোকের নামে মামলা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কালিপুর ও পলতাকান্দা গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে উভয় গ্রামের অজ্ঞাতপরিচয় দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে আজ সোমবার সকালে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দাঙ্গাবাজদের গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে।
গতকাল রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ভৈরবের পৌর এলাকার কালিপুর ও পলতাকান্দা গ্রামবাসীর মধ্যে হওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মির্জা মো. সুলায়মান, এসআই মো. শফিকুল ইসলামসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত লোক আহত হন। এ সময় ভাঙচুর হয় বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও বাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশ প্রায় অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে।
আহতদের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আহত এসআই শফিকুল ইসলামকে প্রথমে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখান থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত শনিবার রাতে ভৈরব পৌর শহরের দক্ষিণ কালিপুর এলাকায় বাউল গানের আসর হয়। মস্তু ফকির নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ওই গানের আসরে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে কালিপুরের যুবকদের সঙ্গে পলতাকান্দা গ্রামের যুবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর উভয় গ্রামের মুরব্বিরা তাৎক্ষণিক আলোচনা করে রোববার বিকেলে মীমাংসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মস্তু ফকিরের ভাগ্নে কালিপুর গ্রামের মুছা (৪০) মিয়া নামের এক ব্যক্তি ভৈরব বাজার যেতে পলতাকান্দা ব্রিজের কাছে এলে তাঁকে ধরে মারধর করেন পলতাকান্দা এলাকার যুবকরা। এ খবর কালিপুর গ্রামে পৌঁছালে কয়েকশ গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে দুপুর দেড়টার দিকে দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায় পলতাকান্দা গ্রামে। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মো. সুলায়মান সংঘর্ষ থামাতে কালিপুর গ্রামে আসেন। এ সময় তাঁকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে মারলে তিনি আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি ফিরে এলে পলতাকান্দা এলাকাসহ তাঁর নিজ গ্রাম দক্ষিণ চণ্ডীবের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নারী-পুরুষসহ কয়েকশ লোক দেশি অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশত লোক আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলেও সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হয়। পরে র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভৈরবের ইউএনও দিলরুবা আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁরা প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে শাস্তির আশ্বাস দিয়ে সংঘর্ষ পরিত্যাগের আহ্বান জানান। তাঁদের সেই আশ্বাসে পরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষ থেকে সরে যায়।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ র্যাবের টহল থাকবে।
পরে রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উভয় গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দুদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষের বিষয়ে আগামী বুধবার সকালে দক্ষিণ চণ্ডীবের এলাকার হাজি আসমত আলী এতিমখানা মাঠে সালিশ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতারা উভয় গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানায় সূত্রটি।