‘সু চির কাছে জানতে চাই, কেন রোহিঙ্গারা শরণার্থী?’
শান্তিতে নোবেল জয়ী মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অপর তিন নারী- উত্তর আয়ারল্যান্ডের ম্যারেইড ম্যাগুয়ার, ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান এবং ইরানের শিরিন এবাদি।
আজ বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, ‘সু চির কাছে জানতে চাই কেন রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়েছে।’ তাঁরা জানান, সু চি এ ব্যাপারে চুপ ছিলেন। এর দায়ও তাঁকে নিতে হবে।
তাওয়াক্কল কারমান বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো আমরা পরিদর্শন করতে চাই। সে সুযোগ আমাদের দিতে অং সান সু চিকে আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের দায় মিয়ানমারের সরকারকেও নিতে হবে।’
কারমান আরো বলেন, ‘সরকার প্রধান হিসেবে সু চির দায়িত্ব রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা। তা ছাড়া তিনি তো শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। কীভাবে তিনি চুপ থাকতে পারেন? কেন তিনি সরকারপ্রধান হয়ে বার্মার আর্মির এসব নির্যাতনের অংশীদার হচ্ছেন। সু চির উচিত সরকার থেকে পদত্যাগ করা। অন্যাথায় তাঁকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
কারমান আরো বলেন, ‘আমরা সু চির সঙ্গে অনেক যোগাযোগ করেছি। কিন্তু দুঃখজনক, তিনি কোনো জবাব দিচ্ছেন না। আমরা মিয়ানমারে যাব।’
ইরানের শিরিন এবাদি বলেন, ‘সু চিকে মনে করিয়ে দিতে চাই তিনি যখন নিজ দেশে গৃহবন্দি ছিলেন তখন তাঁর মুক্তির জন্য অনেক আন্দোলন করেছি। কিন্তু আজ তিনি রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।’
শিরিন এবাদি আরো বলেন, ‘সু চি যখন মিয়ানমারে গৃহবন্দি ছিলেন আমরা তাঁর মুক্তির জন্য কাজ করেছি। ওয়াশিংটনে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি জানিয়েছি। তিনি তাঁর অধিকার ফিরে পেয়েছেন। অথচ আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি যখন দেখেছি রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চলছে অথচ তিনি নীরব রয়েছেন।’
উত্তর আয়ারল্যান্ডের ম্যারেইড ম্যাগুয়ার বলেন, ‘সু চিকে বলতে চাই আপনি যখন গৃহবন্দি ছিলেন তখন নিজ দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারে কথা বলেছিলেন। মানবাধিকারের বিষয়টি আপনার দেশের সব নাগরিকের রয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরও সেই অধিকার রয়েছে।’
ম্যাগুয়ার আরো বলেন, ‘সু চির কাছে জানতে চাই রোহিঙ্গাদের ওপর কী ঘটেছে। কেন রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়েছে? বিশ্ব কি আপনার কাছে মানবতা আশা করে না? আপনি কি আপনার বন্দিদশার কথা ভুলে গেলেন? বার্মার সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযানের বিরুদ্ধে আপনার সাহসী পদক্ষেপ নিতে আমরা আহ্বান জানাই।’
ম্যাগুয়ার আরো বলেন, ‘এক রোহিঙ্গা নারী আমাদের বলেছিল সেনাসদস্যরা ঘরে ঢুকে চোখের সামনে তাঁর স্বামীকে হত্যা করে। তারপর তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পথে ছয় মাসের শিশুকে পুকুরে ছুঁড়ে মারে।সেনাক্যাম্পে ওই নারীকে বারবার ধর্ষণ করা হয়। এরপর ওই নারীকে মৃত মনে করে মাঠে ফেলা রেখে যায় সেনারা।’
গত সোমবার ও মঙ্গলবার কক্সবাজারে একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবাদি, কারমান ও ম্যাগুয়ার। তাঁরা রোহিঙ্গাদের কথা শোনেন।