ড. কামালের কাছে পরামর্শ নিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আইনি পরামর্শের জন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিলের টয়োটা টাওয়ারে তাঁরা বৈঠক করেন।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রেজাক খান ও আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলার ব্যাপারে পরামর্শের জন্য ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গিয়ে ছিলাম। তিনি মামলার খোঁজ-খবর নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন এবং আইনগত পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আমাদের বলেছেন, ‘‘এ মামলার নথি দেখে তো মনে হয়েছে; খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ নেই; এ মামলায় জামিন হয়ে যাওয়ার কথা।’’ তিনি আমাদের এই মামলার একটি ফাইলও রেখেছেন।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনে ড. কামাল হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে পেতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না, বিএনপির মহাসচিব বলতে পারবেন।’
অপরদিকে সাক্ষাতের সময় উপস্থিত থাকা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন এসেছিলেন স্যারের কাছে (ড. কামাল হোসেন)। স্যার জানিয়েছেন, তিনি এখন ক্রিমিনাল কেস (ফৌজদারি মামলা) করেন না। তবে খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁর সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) থাকবে।’
ড. কামাল হোসেনকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে বিএনপির অনুরোধ ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। উল্টো তিনিসহ (ড. কামাল হোসেন) সুশীল সমাজের সব প্রতিনিধি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার পর থেকেই কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ২২ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন। ওই দিন শুনানি শেষে নিম্ন আদালত থেকে নথি আসার পর জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ।