শিরিন এবাদির প্রশ্ন, মুসলিম দেশগুলো কোথায়?
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কথা শুনলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইরানের শিরিন এবাদি। তিনি বললেন, ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুর একটা পৃথিবীতে বাস করছি আমরা।’
শিরিন এবাদি প্রশ্ন করেন, রোহিঙ্গাদের দুরবস্থার সময় মুসলিম দেশগুলো কোথায়? তিনি বলেন, ‘ওই সব ধনী মুসলিম দেশগুলোর প্রতি ধিক্কার। যারা এখানকার (রোহিঙ্গা) মুসলিমদের দুরবস্থা দেখছে কিন্তু কিছুই করছে না। ইরান, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ধনী। কিন্তু তারা অর্থ ব্যয় করছে কোথায়? অন্য মুসলমানদের হত্যা করার জন্য অস্ত্র কিনছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।’
গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন শিরিন এবাদি। গতকাল সোমবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শিরিন এবাদি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন নোবেল বিজয়ী আরো দুই ব্যক্তিত্ব ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মেরেইড ম্যাগুয়ার। তিনজনই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ম্যাগুয়ার ১৯৭৬ সালে, শিরিন এবাদি ২০০৩ সালে এবং কারমান ২০১১ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও দেখা করেন শিরিন, কারমান ও ম্যাগুয়ার। দুর্দশার কথা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তাঁরা তিনজন।
শিরিন এবাদি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তা নিয়ে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে।’
শিরিন আরো বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খুব সীমিতভাবে এগিয়ে এসেছে।’
অবস্থাপন্ন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সমালোচনা করেন শিরিন এবাদি। তিনি বলেন, ‘ওই ধনী মুসলিম দেশগুলোর প্রতি ধিক্কার যারা এখানকার মুসলিমদের দুরবস্থা দেখছে কিন্তু কিছুই করছে না। ইরান, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ধনী দেশ। কিন্তু তাঁরা অর্থ ব্যয় করছে কোথায়? অন্য মুসলিমদের হত্যা করার জন্য অস্ত্র কিনছে।’
সমগ্র মুসলিম জাতিসত্তাকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে শিরিন এবাদি বলেন, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। অথচ কয়েকটি মুসলিম দেশ কিছুই করছে না। তিনি বলেন, ‘ইরান কোথায়? সৌদি আরব কোথায়? কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত কোথায়?’
মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন থেকে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা জানতে তৃতীয় দিনের মতো আজ মঙ্গলবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তম্ব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিন নারী।
এর আগে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালীর তাজনিমারখোলা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ক্যাম্পের সার্বিক অবস্থান এবং রোহিঙ্গাদের জীবন-যাপনের খোঁজ খবর নেন এবাদি, কারমান ও ম্যাগুয়ার। ধর্ষণের শিকার নারী, গুলিতে আহতসহ নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
গত বছর আগস্টের শেষদিকে দেশ ছাড়তে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার ও বান্দরবানের একাধিক এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন রোহিঙ্গারা। সরকারের হিসেবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি।