খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার নাশকতার মামলা চলবে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার নাশকতা মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ উঠিয়ে দিয়েছেন চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে মামলাটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার নাশকতার এ মামলা কার্যক্রম স্থগিত করে চেম্বার আদালতের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। এতে করে এ মামলা কার্যক্রম চলতে এখন আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এর আগে ২০১৭ সালে নাশকতার এ মামলা কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার অন্য আইনজীবীরা কেউ শুনানির জন্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
গত বছর ৩ অক্টোবর মামলা কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৫ অক্টোবর মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। আজ শুনানি শেষে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে মামলার স্থগিতাদেশ উঠিয়ে দেন।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার এক আইনজীবী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আজ বিচারিক আদালতে আইনজীবীদের নির্বাচন ছিল। তাই সিনিয়র আইনজীবীরা সবাই ভোট দেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। এ কারণে মামলা শুনানির জন্য একদিন সময় চেয়েছিলেন আমাদের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম। কিন্তু আদালত সময় না দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে মামলাটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ডাকা অবরোধ চলাকালে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। মুহূর্তের মধ্যে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সে সময় বাসের কয়েক যাত্রী জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণে বাঁচতে পারলেও দগ্ধ হন অন্তত ২০ যাত্রী। তাঁদের মধ্যে আটজন নিহত হন।
এ ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, প্রয়াত এম কে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সালাউদ্দিন আহমেদ এবং মামলার প্রধান আসামি জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলি আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলা তদন্তকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীসহ ২২ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তদন্তকালে আসামিদের দুজন মারা যান। এ ছাড়া চারজন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। মামলায় অভিযুক্ত ১২ জনসহ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় সম্পৃক্ত তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।