খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সংসদে অর্থমন্ত্রী
গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এ অর্থবছরের একই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি কমায় সামষ্টিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরের বাজেট বাস্তবায়ন ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজকের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সামষ্টিক মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়লেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি অনেকখানি কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল, সাবলীল পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি এবং নিয়ন্ত্রিত মুদ্রা সরবরাহের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
এ সময় দেশের অর্থনীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য সামনে কোনো অশনিসংকেত নেই।
মুহিত বলেন, আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “চলতি অর্থবছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি জাতিসংঘের ‘কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)’ সচিবালয়ের একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করে নিশ্চিত করেছে ২০১৮ সালের মার্চ সময়ে নির্ধারিত সিডিপি রিভিউ সভার আগেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়োজনীয় তিনটি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হবে। আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রার এ মাহেন্দ্রক্ষণকে পুঁজি করে আমরা আরো অগ্রসর হতে চাই।”
মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সরকারের এ দুই মেয়াদে পরিকল্পিত ও লক্ষ্যাভিমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ ইপ্সিত লক্ষ্যে নিকটবর্তী হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বৃত্ত ভেঙে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে, অতিদারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে।
মন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। একইসাথে, বিশ্বায়নের এ যুগে সরকারের কর্মপরিকল্পনাগুলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া হয়েছে।
মুহিত বলেন, এ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয়, প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক।
মন্ত্রী বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রান্তিকে তা বেড়ে ১০ দশমিক ২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি আয় বেড়ে ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ, আমদানির ঋণপত্র খোলার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
মুহিত বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এ সময়ে ৩২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে এটি ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।