‘ঋণের দায়ে নয়, শিক্ষক নজরুলকে হত্যা করা হয়েছে’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শিক্ষক খন্দকার নজরুল ইসলাম বাবুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। পরিবারের দাবি, দুদিন আগে ওই শিক্ষককে মোবাইল ফোনে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এরপর গতকাল ব্রিজে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ওই শিক্ষকের লাশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উল্লাপাড়া উপজেলার নলসন্ধ্যা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ওই শিক্ষকের জানাজা হয়। নলসন্ধ্যা নিজ গ্রামের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে শিক্ষক নজরুল ইসলাম বাবুলের ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর মরদেহ রাত ৯টার দিকে নিজ এলাকায় পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের আহাজারিতে পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে।
নিহতের স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল নাজমা খাতুনের ভাইপো ও নবম শ্রেণির ছাত্র সাকিবকে (১৪) তার সহপাঠীরা গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্কে বেড়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। এরপর তাঁকে হত্যার পর লাশ ওই পার্কের জঙ্গলে গাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখে। ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করা হয়। শিক্ষক নজরুল ইসলাম এ হত্যা মামলাটি পরিচালনা করছিলেন।
নাজমা খাতুন আরো জানান, কৌশলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে সহযোগিতা করেন শিক্ষক নজরুল ইসলাম। এ ঘটনায় ওই মামলার আসামিরা তাঁর ওপর প্রতিশোধ নিতে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নেন। এরপর তাঁকে হত্যার পর লাশ ব্রিজে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে।
নাজমা দাবি করেন, ‘আমার স্বামী ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
নিহতের বড় ভাই মানিক মিয়া জানান, গত রোববার সকালে শিক্ষক নজরুল বাড়ি থেকে স্কুলে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত ছিলেন। এরপর স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্তও তিনি বাড়ি ফেরেননি। এ সময় বাড়িয়া গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁর খোঁজে বাড়ি আসেন। শিক্ষক নজরুলকে বাড়িতে না পেয়ে মোবাইল ফোনে অন্য স্থানে ডেকে নেন। সেই থেকে গত দুদিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর গতকাল মঙ্গলবার গাড়াদহ ব্রিজে শিক্ষক বাবুলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা।
মানিক আরো বলেন, ‘তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে কীভাবে তাঁদের সংসার চলবে এখন। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
মাকড়কোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষক খন্দকার নজরুল ইসলাম বাড়িতে যেতে হবে বলে গত রোববার দুপুরের দিকে স্কুল থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ না পেয়ে ওই শিক্ষকের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাজা গোলাম কিবরিয়া জানান, স্কুলশিক্ষকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের সময় তাঁর প্যান্টের পকেট থেকে একটি চিঠি পাওয়া গেছে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে।
প্রাথমিকভাবে শাহজাদপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে করতোয়া নদীর গাড়াদহ সেতুর রেলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় শিক্ষক নজরুল ইসলামের লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহের পকেটে চিরকুট পাওয়া গেছে। এতে লেখা রয়েছে, ঋণের দায়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত শিক্ষক নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নলসোন্দা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শাহজাদপুর উপজেলার মাকড়কোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।