প্রশ্ন ফাঁস রোধে আমরা হস্তক্ষেপ করব : হাইকোর্ট
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া শুনানির একপর্যায়ে আদালতকে বলেন, বিজ্ঞ আদালত সারা দেশে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ সব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর এটা মহামারী আকারে ধারণ করেছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে এসব ফাঁসের ঘটনায় সরকার উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, একটি দেশকে ধ্বংসের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়াই যথেষ্ট।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার খারাপ নজির। তবে এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ সময় আদালত বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জাতির জন্য মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ। এভাবে চলতে পারে না। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে এত দিন যা হওয়ার হয়েছে, সরকারকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশ্ন ফাঁস রোধে এখন থেকে আমরা হস্তক্ষেপ করব।’
এ সময় রিটকারীর আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আদালতকে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদলত চলমান এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রতিটি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। কিছু দুষ্কৃতকারীর কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। তাই চলমান এ পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমরা রিট আবেদনে এই মর্মে রুলও চেয়েছি।’
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কিছু জায়গায় সমস্যার কারণে পুরো দেশের পরীক্ষা বাতিল করা ঠিক হবে না। এ সময় আদালত বলেন, ‘আমাদের এ আদেশ দেওয়া ঠিক হবে না।’ পরে আদালত প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
একই সঙ্গে আদালত প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত ঘটনায় একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস রোধে প্রশাসনিক একটি কমিটি করতে নির্দেশ দেন। যে কমিটিতে বিভিন্ন শিক্ষাবিদ থাকবেন। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল খায়রুন নেসা।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, আইন সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএলের চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক-চেয়ারম্যান, ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চলমান এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নতুন প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফাঁসের ঘটনায় বিচারিক ও প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে দণ্ডরোপে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়ে। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতে বুধবার রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, সিকদার মাহমুদুর রাজি, মো. রাজু মিয়া ও নূর মোহাম্মদ আজমী।