‘বন্দি খালেদা জিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে সাজা হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
এরপর থেকে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে মামলার সত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। অনুলিপি হাতে পেলেই আবেদন করা হবে জামিনের। অন্যদিকে রায়ের কপি পেলে সাজা বাড়ানোর অবেদন করার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ওঠে যে বিএনপির প্রধানের অবর্তমানে দলে ভাঙন তৈরি হতে পারে। দলীয় প্রধানের সাজা হলে দলের জনপ্রিয়তা কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছিল অনেকে।
তবে রায়ের আগের দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে এসব আশঙ্কার জবাব দিয়ে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জোর দিয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপিকে কেউ ভাঙতে পারবে না। বিএনপি ও খালেদা আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।
বিএনপির একাধিক নেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, চেয়ারপারসনের সাজা দলকে দুর্বল করতে পারেনি। বরং এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল আগের চেয়ে আরো বেশি শক্ত হয়েছে, বাড়িয়েছে ঐক্য। জনপ্রিয়তা বেড়েছে বিএনপির।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জেলে বন্দি খালেদা জিয়া অনেক বেশি জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলে নিয়েছে। এর মাধ্যমে বিএনপি নয় বরং আওয়ামী লীগের মনোবল ভেঙে গেছে। তাদের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়েছে।’
পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে তাদের সবাই শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছে বলে দাবি করেন আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি বলেন, ‘বেশি দূর যেতে হবে না, বাংলাদেশের দিকে তাকালেই সেটি দেখতে পাবেন। সুতরাং যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন বিএনপির ঐক্যে ভাঙন ধরানো যাবে না। কারণ ম্যাডামকে জেলে নিয়ে আমাদের মধ্যে যে বিভেদ ছিল সেটি সরকারই দূর করে দিয়েছে।’
এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির। তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দল। আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করতে পারবে না। তবে কেউ যদি বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করে তাহলে তা কখনো সফল হবে না।’
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, ‘দেশের এমন কোনো এলাকা নাই যেখানে বিএনপির কমিটি ও নেতাকর্মী নেই। দেশের মাটি ও মানুষের প্রাণের নেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দি করে তার জনপ্রিয়তা আরো অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। কারণ পৃথিবীতে সবসময় নির্যাতিতদের পাশে থাকে জনগণ। এর আগেও জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রী বানান।’
বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আমাদের মা। তাঁকে জেলে বন্দি করে কখনো বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে না। অতীতের চেয়ে বিএনপি এখন আরো অনেক বেশি শক্তিশালী। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ দূর হয়ে ঐক্য গড়ে উঠেছে। আর যারাই বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করবে তারাই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এঁদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।