নাম সোহাগ, কাজ ভয়াবহ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ বছর বয়সী শিশু রোকসানাকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনার একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া যুবকের নাম সোহাগ (২৮)।
গতকাল রোববার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ টি হোসেন রোড এলাকায় নিজ বাসা থেকে সোহাগকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে আজ সোমবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশ প্রথমে সোহাগের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। পরে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
স্বীকারোক্তিতে সোহাগ জানান, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইল আরামবাগ এলাকায় গোদনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রোকসানাকে নিজ বাসা থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যান সোহাগ। পরদিন তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ ছয় হাজার টাকা দাবি করেন। এ ঘটনায় রোকসানার বাবা আশরাফুল মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে রোকসানাকে নিজ বাসায় নিয়ে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ধর্ষণ ও নির্মমভাবে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সোহাগ। পরে রোকসানার হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে সোনারগাঁয়ের কাইক্কারটেক চর এলাকায় নিয়ে যান। সেখানকার সেতুর নিচে বস্তাভর্তি রোকশানার লাশ ফেলে দেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সোহাগ।
এ ঘটনায় সোহাগের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিহত রোকসানার বাবা একটি মামলা (মামলা নম্বর ৫৩) করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন আহমেদ জানান, সোহাগের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে অপহরণের তিনদিন পর ২৬ জানুয়ারি সকালে সোনারগাঁ থানা পুলিশ রোকসানার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে।
সোহাগ নিহত রোকসানার বড় বোন আরমিনার বান্ধবী সাবিনা ইয়াছমিন পাখির স্বামী। সম্পর্কে দুলাভাই হিসেবে সোহাগ রোকসানাদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।
সোহাগের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন রোকসানার পরিবারের সদস্যরা। রোকসানার বড় বোন আরমিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বোনকে এর আগের দিন সোহাগে নিয়া গেছে ডাইকা। পরের দিনও (২৩ জানুয়ারি) একইভাবে ডাকছে। ডাইকা লইয়া যাইয়া নির্যাতন কইরা মাইরা হালাই দিছে। আমার একটাই দাবি, আমার বোনকে যেভাবে মারছে, আমরা ওর ফাঁসি চাই। মৃত্যুর বদলে মৃত্যু চাই।’
এদিকে শিশু মেয়েকে হারিয়ে রোকসানার মা বলেন, ‘আমার ছোট্ট আদরের মেয়ে, আমার কলিজাকে নিয়া গেছে। আমি ওর বিচার চাই, আমি ওর মৃত্যু চাই। আমি ওর ফাসির অর্ডার চাই। আর কিছু চাই না। এই আমার দাবি।’