ভণ্ড প্রেমিকে শেষ হয়ে গেল স্বপ্না!
হবিগঞ্জে প্রেমিকের প্রতারণার শিকার হয়ে স্বপ্না আক্তার নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়েটির পরিবার দরিদ্র হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রভাবশালী প্রেমিকের পরিবার।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের অগ্নিকোনা এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন মিয়ার ছেলে ও লাখাই সড়কের রিচি এলাকার পলাশ ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যবস্থাপক নয়ন আহমেদ শান্তর সঙ্গে মাদ্রাসায় আসা যাওয়ার সুবাদে পরিচয় হয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না আক্তারের। একপর্যায়ে শান্ত তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে স্বপ্না প্রত্যাখ্যান করে। পরে সে রাজি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শান্ত বিয়ের আশ্বাস দিয়ে প্রায়ই দোকান ঘরের পেছনের একটি রুমে স্বপ্নার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতো। একপর্যায়ে স্বপ্না শান্তকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু শান্ত বিয়ে করতে রাজি না হয়ে এড়িয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় শান্ত ওই শোরুমে স্বপ্নার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়। পরে লোক চলাচলের কারণে মেয়েটিকে গোপনে দোকান থেকে বের করতে না পেরে শান্ত মেয়েটিকে দোকানে তালাবদ্ধ করে বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরও শান্ত ফিরে না আসায় মেয়েটি চিৎকার করে। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে শান্তকে ধরে এনে দোকানের তালা খুলে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
শান্ত জানান, তাঁর অভিভাবক নিয়ে এসে শুক্রবার বিয়ে করবেন। পরে ওইদিনই রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজু মিয়ার উপস্থিতিতে হাজি জিতু মিয়ার বাড়িতে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে স্বপ্না আক্তারের চাচাতো ভাই দুলাল মিয়া জানান, সালিশে স্বপ্নার পরিবার এবং শান্তর বাবাসহ আত্মীয়-স্বজন এলেও শান্ত আসেনি। সালিশের বিচারকরা শান্তকে সালিশে হাজির করার অনুরোধ জানালে তাঁর বাবা সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন মিয়া মন্তব্য করেন, তাঁর ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। তাছাড়া শান্ত কোথায় আছে তা তাঁরা জানেন না।
এ অবস্থায় মাতবররা মন্তব্য করেন, যেহেতু একটি পক্ষ সালিশে হাজির হয়নি, তাই একপক্ষের বক্তব্য শুনে কোনো রায় দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সালিশে কোনো রায় দেওয়া হয়নি।
সালিশের এ তথ্য এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন হাজি জিতু মিয়া। তিনি জানান, যেহেতু এটি কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয় ছিল না। তাই এই বৈঠকে কেউ সভাপতিত্ব করেননি।
দোকানে প্রেমিকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে ধরা পড়ে যাওয়া, বিষয়টি নিয়ে সালিশ বিচারে আলোচনা এবং সবশেষ বিয়ে করতে প্রেমিকের অস্বীকারের ঘটনায় ক্ষোভে-দুঃখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে স্বপ্না আক্তার।
স্বপ্নার বোনের বরাত দিয়ে তার বাবা মতলিব মিয়া জানান, শুক্রবার সকালে স্বপ্না বোনকে বলেছে, তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। শান্তকে বিয়ে করতে না পারলে এ জীবন রাখবে না।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিজ ঘরে দরজা বন্ধ করে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় দঁড়ি পেচিয়ে আত্মহত্যা করে স্বপ্না। খবর পেয়ে বিকেলে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ডালিম আহমেদ, উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল আহমেদ ও সাহিদ মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বপ্নার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
স্বপ্না আক্তার রিচি গ্রামের রিকশাচালক মতলিব মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় দাখিল মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। ঘটনার পর থেকে প্রেমিক নয়ন আহমেদ শান্ত (১৮) গা ঢাকা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ডালিম আহমেদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। সুরতহালে রহস্যজনক আলামতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও শান্তকে ধরতে পারলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ঘটনার পর থেকে শান্ত পালিয়ে গেছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে লাশের সঙ্গে থাকা স্বপ্নার বাবা রিকশাচালক মতলিব মিয়া ও মা মঞ্জিলা বেগমসহ বোনেরা স্বপ্নার আত্মহত্যার জন্য প্রেমিক শান্তকে দায়ী করে তার বিচার দাবি করেন।
আজ শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে স্বপ্না আক্তারের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। তার বাবা জানান, লাশ দাফনের পর তিনি থানায় মামলা দায়ের করবেন।