রিপন খান পরিচয়ে রাখাল চন্দ্রের বিয়ে, স্বীকৃতি চান স্ত্রী
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামের বাসিন্দা রাখাল চন্দ্র পাল (৩১)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি মুসলমান পরিচয় দিয়ে এক পোশাককর্মীকে বিয়ে করেন এবং তাঁর পাঁচ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।
ওই রাখালের স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে গত শনিবার থেকে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামের বাড়িতে ছয়দিন ধরে অবস্থান করছেন তহমিনা আক্তার (২৭)। তাঁর সঙ্গে আছে এক বছরের কন্যাসন্তান।
জানা যায়, ঢাকার মিরপুরের রিও ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেডে কাজ করতেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা গ্রামের এনায়েত উল্লাহর মেয়ে তহমিনা আক্তার ও বাগেরহাটের রামপালের গিলাতলা গ্রামের রাখাল চন্দ্র পাল। সেখানে তহমিনাকে দেখে পছন্দ করেন রাখাল এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক করতে চান। হিন্দু ধর্মের পরিচয় পেলে তহমিনা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক নাও করতে পারেন-এই আশঙ্কায় রাখাল চন্দ্র পাল নিজেকে মুসলমান পরিচয় দেন, নাম বলেন রিপন খান। এই বলে তহমিনার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এক সময় রিপন খান নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন রাখাল। এদিকে সম্পর্কের একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ তারা বিয়ে করেন এবং নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ের মাধ্যমে হলফনামা (এফিডেভিট) করেন। এরপর তাঁদের একটি কন্যা সন্তান হয়। সেই মেয়ের বয়স এখন এক বছর।
তহমিনা অভিযোগ করেন, বিয়ের পর তাঁর স্বামী বিভিন্ন অজুহাতে তাঁর কাছে সঞ্চিত পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এরপর মাস খানেক আগে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে তাঁদের রেখে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তিনি রাজধানীর পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরে বহু খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে স্বামীর রামপালের বাড়ির ঠিকানায় রওনা হন তহমিনা। রামপালে এসে স্থানীয় লোকজনকে তাঁদের বিয়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঠিকানা খুঁজে পান তহমিনা।
বিয়ের এই ছবি, বিয়ের কাগজপত্র ও এক বছর বয়সী শিশু মেয়ে নিয়ে স্বীকৃতির দাবিতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছেন তহমিনা আক্তার। ছবি : সংগৃহীত
এ সময় স্থানীয় লোকজন ওই ছবি দেখে জানান, তিনি রিপন খান নন, রাখাল চন্দ্র পাল। স্থানীয়দের মুখে স্বামী মুসলমান নয় বরং হিন্দু এ কথা শুনতেই কোলে থাকা সন্তানকে নিয়ে চিৎকার করে কান্নাকাটি ও আহাজারি করতে থাকেন তহমিনা। তহমিনার আহাজারি দেখে রাখালের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানান স্থানীয়রা।
এরপর রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. আবু সাইদ বিষয়টি নিয়ে রাখাল চন্দ্র পালের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
রাখাল চন্দ্র পালের মা গীতা রানী পাল বলেন, ‘আমার ছেলে আগে কোনো বিয়ে করেনি, কয়েক দিন আগে আমরা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দিয়েছি। রাখাল বর্তমানে কোথায় আছে তা আমরা জানি না।’ তহমিনা ও তাঁর শিশু মেয়েকে স্বীকৃতি দেবেন না বলেও জানিয়ে দেন।
তহমিনা বলেন, ‘আমি স্বামীর সংসার ও সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতি পেতে চাই। হিন্দু নাম পরিচয় গোপন রেখে মুসলমান পরিচয়ে আমাকে বিয়ে করে প্রতারণার মাধ্যমে আমার গচ্ছিত টাকা ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করেছে রিপন। আমি আমার ও সন্তানের স্বীকৃতি চাই। এ জন্য আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণসহ সবার সহযোগিতা চাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আবু সাইদ বলেন, ‘রাখাল পাল তার জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে রিপন খান নাম ধারণ করে একজন মুসলিম মেয়েকে প্রতারণার মাধ্যমে যে বিবাহ করেছে কাগজপত্রে তার প্রমাণ মিলেছে। রাখাল যে অন্যায় করেছে তা সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার শামিল। এ প্রতারণার সঠিক বিচার হওয়া উচিত।’
উপজেলা চেয়ারম্যান আরো জানান, তিনি তহমিনার মেয়ের সঙ্গে রাখাল চন্দ্র পালের ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন।
এদিকে এ ঘটনায় রাখাল চন্দ্র পালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।