সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের পঞ্চম বছরের শুরু
ধারাবাহিক দ্বিতীয় মেয়াদে আজ শুক্রবার পঞ্চম ও শেষ বছরে পদার্পণ করল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। শেষ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এই ভাষণ একইসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বাসস।
গত পাঁচ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও নানামুখী স্বীকৃতি অর্জন করেছে সরকার। বিশেষ করে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রতায়ের কাছ থেকে ‘নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন তিনি।
বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে সরকার। আর্থ-সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রের সূচকে বাংলাদেশ সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং এখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১০ ডলার। এ সময়ে মুদ্রাস্ফীতি বিগত ৫৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। দারিদ্র্য হার ৫৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশ। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছর।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩২ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানির পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরি বাসসকে বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ে দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করতে চায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এ সমযে প্রধান খাদ্য ভাতের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (বারি) মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাসসকে বলেন, ‘সরকারের কিছু কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ ও সময়মতো তাতে সহযোগিতা প্রদান করায় কৃষিক্ষেত্র এখন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।’
সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও তাতে অর্থ-সহায়তা বৃদ্ধি করায় ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের দারিদ্র্য থেকে মুক্তিলাভ সহজ হয়েছে।
বর্তমানে দেশের প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে এবং বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬ অনুযায়ী লিঙ্গ সমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
গত বছর পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও দোহাজারী-কক্সবাজারগ- গুনদুম রেললাইনের মতো মেগা প্রকল্পগুলোতে গতি সঞ্চার হয়েছে।
গত বছর ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহু প্রতীক্ষিত দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন, যার মাধ্যমে দেশ বিশ্ব পারমাণবিক জগতে প্রবেশ করেছে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং ইতিমধ্যে এর ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ফেনী জেলার মহীপালে দেশের প্রথম ছয় লেনের ফ্লাইওভারের কাজ নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হয়েছে এবং গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ১০ ডিসেম্বর যশোরে নবনির্মিত ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’-এর উদ্বোধন করেন, যা দেশের আইটি সেক্টরে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।