নওগাঁয় দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
নওগাঁর বদলগাছিতে বিরোধপূর্ণ জমিতে গত রোববার রাতে টিনের চাল ও সাইনবোর্ড টানিয়ে দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ওই স্থানে দলিল লেখার কাজ শুরু করেছেন সমিতির লোকজন।
এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে দলিল লেখকরা ওই জমিতে থাকা ২৭টি আমগাছ কেটে জমিটি জবর দখলের চেষ্টা করে। ওই ঘটনার পরের দিন জমির মালিকের ছেলে জাহাঙ্গীর সেলিম বাদী হয়ে বদলগাছী থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি এখনো মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বদলগাছী টিঅ্যান্ডটি অফিসের পাশে ওই জমির পশ্চিম পাশে টিন দিয়ে ঘর তৈরি করেছে। সেখানে দলিল লেখার কাজ করছেন দলিল লেখকরা। এক পাশে বদলগাছী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের জন্য ‘নির্ধারিত স্থান’ লেখা একটি সাইরনবোর্ড টাঙানো রয়েছে।
জমির মালিক মৃত মফিজ আহম্মেদের ছেলে জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর দলিল লেখক সমিতির লোকজন ওই জমিতে থাকা বেশ কিছু আমগাছ কেটে তা দখলের চেষ্টা করে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও করি। কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত রোববার সন্ধ্যা থেকে দলিল লেখক সমিতির লোকজন দলবল বেঁধে ওই জমিতে স্থাপনা করতে শুরু করে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও থানায় অবহিত করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘উপজেলা জিধিরপুর মৌজার সাবেক এসএ খতিয়ান নম্বর ২০৭, সাবেক দাগ নম্বর ৪৪-এর কাতে মোট এক একর ২০ শতক জমি ১৯৭৫ সালে ৯ ডিসেম্বর ২৭ হাজার ২৫৫ নম্বর দলিল মূলে মৃত মশিতুল্লাহ কাজীর ওয়ারিশগণের কাছ থেকে ক্রয় করেন। তাঁর মধ্যে ৭০ শতক জমি সরকার অধিগ্রহণ করে টিঅ্যান্ডটি অফিস স্থাপন করে। বাকি জমি পৈত্রিক সূত্রে আমি ও আমার অন্য ভাইয়েরা ভোগদখল করে আসছি। ২০১৩ সালে ওই জমিটি ‘খ’ তফশিল গেজেটভুক্ত হলে আমার বাবা মফিজ উদ্দীন সম্পত্তিটি অবমুক্তির জন্য নওগাঁ সহকারী জজ আদালতে ৩৬৪/২০১৩ মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে প্রকৃত মালিকের নামে নামজারির আদেশ দেন। এরপর আমার বড় ভাই এ কে এম ইকবাল হোসেন নামজারির জন্য গত ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই বদলগাছী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে আবেদন করেন। কয়েক দফা শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর পাঁচ হাজার ২৫৫ দলিল মূলে বদলগাছী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নামে দীর্ঘ মেয়াদি লিজ রেজিস্ট্রি করে দেন। আমার বাবা মফিজ উদ্দিন উক্ত দলিল বাতিল চেয়ে গত ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক ও সাব-রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করে নওগাঁ সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা চলমান রয়েছে।
বদলগাছী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সেকেন্দার আলী বলেন, ‘সরকার বদলগাছী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নামে ওই জমিটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেখানে দখলে গিয়েছি।’
বদলগাছী উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার পারভেজ খান জানান, ওই জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। আদালতের রায় যার পক্ষে যাবে তারাই জমিটি পাবে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জমি দখল করতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে রোববার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। বিরোধপূর্ণ জমি হওয়ায় উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ বলেন, ‘জমিটি নিয়ে মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হলে প্রকৃতপক্ষে কেউ দখলে যেতে পারে না। গত রোববার সন্ধ্যায় দলিল লেখক সমিতি জমি দখল করে নিচ্ছে এমন খবর পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানাই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালেহ মো. আশরাফুল ইসলাম উভয়পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করেন।’
মাসুম আলী বেগ আরো বলেন, ‘বর্তমান জেলা প্রশাসকের বদলির আদেশ চলে আসায় বিষয়টি নিয়ে এ মূহূর্তে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। নতুন জেলা প্রশাসক এলে অধিকতর তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’