গর্ভপাতের সময় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মৃত্যু
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের ১৩ বছরের কিশোরী তাসলিমা আক্তার। তবে বাংলাদেশের অন্য কিশোরীদের মতো হয়নি তার জীবন। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ধর্ষণ, সন্তান ধারণ, গর্ভপাত ও সবশেষে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়েছে তাকে।
গতকাল বুধবার রাতে নিহত তাসলিমার লাশ গুম করার সময় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোসাইরহাট থানা পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর আজ বৃহস্পতিবার তা স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত তাসলিমা গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামের মো. ইউসুফ খাঁর মেয়ে। চর মহিষকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছিল সে।
তাসলিমার বড় ভাই বিল্লাল জানান, তাঁদের প্রতিবেশি নূর ইসলাম মাদবর (৬০) বিভিন্ন সময় ভয় ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাসলিমাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এক পর্যায়ে তাসলিমা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে গত সোমবার নূর ইসলাম মাদবরের স্ত্রী আয়শা বেগম ও বোন নাসিমা বেগম তাঁদের পরিবারের অনুমতি নিয়ে তাসলিমাকে বেড়াতে নিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, বেড়ানোর বদলে তাসলিমাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুচাপট্টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। সেখানকার পরিদর্শক মাজেদা বেগম তাসলিমার গর্ভপাত ঘটানোর জন্য তার নিজ বাড়ি একই উপজেলার কোদালপুর বুলুসরদার পাড়ায় নিয়ে যান। গর্ভপাত করানোর এক পর্যায়ে তাসলিমার মৃত্যু হয়। পরে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক মাজেদা বেগম ও তাঁর ভাই আমিরুল ওরফে আমিন ছৈয়ায়ল মিলে তাসলিমার লাশ গুম করার চেষ্টা করেন। এজন্য গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে কুচাপট্টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে লাশ মাটিচাপা দেয়ার জন্য গর্ত খোঁড়া হচ্ছিল।
বিষয়টি বুঝতে পেরে গ্রাম পুলিশসহ স্থানীয়রা গোসাইরহাট থানা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাসলিমার মরদেহ উদ্ধার করে এবং মাজেদা বেগম ও তাঁর ভাই আমিরুলকে আটক করে।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকে নুরুল ইসলাম মাদবর ও তাঁর পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন।
এ ঘটনায় তাসলিমার বাবা ইউসুফ খান বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে গোসাইরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ইউসুফ খান বলেন, তাঁর মেয়ে তাসলিমাকে গত সোমবার আত্মীয়র বাড়িতে এক দিন বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যান প্রতিবেশী নূর ইসলাম মাদবর ও তাঁর স্ত্রী আয়শা বেগম। একদিন পর মেয়ের খোঁজ নিয়ে দেখেন মেয়ে ফেরেনি। পরে গতকাল রাতে জানতে পারেন তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এখন মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তিনি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এহসানুল ইসলাম বলেন, লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে বাচ্চাটি শরীরের বাইরে ছিল। বাচ্চাটির বয়স সাত থেকে আট মাস হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। এই চিকিৎসক জানান, কিশোরীর শরীরের কিছু অঙ্গ, রক্তের নমুনা ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার জন্য শিশুটির শরীরের চুল, নখ, মাথা ও বুকের হাড় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
শরীয়তপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) খায়রুল হাসান জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি লাশ গুম করার চেষ্টা চলছে জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে গুমের চেষ্টা করা দুজনকে আটক করেন। এই ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবার করা মামলা বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
খায়রুল হাসান আরো জানান, আটক স্বাস্থ্য পরিদর্শক মাজেদা বেগম পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, নূর ইসলাম মাদবরই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিলেন। তিনি মাজেদা বেগমের কাছে সাহায্য চাইলে মাজেদা গর্ভপাতের পরামর্শ দেন।