যৌতুকের দাবিতে সিগারেটের ছ্যাকা, চুল কর্তন
নরসিংদীতে যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূর মাথার চুল ও ভ্রু কেটে দেওয়া হয়েছে। দুই হাতে দেওয়া হয়েছে সিগারেটের ছ্যাঁকা। শারীরিক নির্যাতনের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান ওই গৃহবধূ। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার জাহাঙ্গীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় অথরা আক্তার সুমি (২২) নামের ওই গৃহবধূ আজ মঙ্গলবার বাদী হয়ে তাঁর স্বামী কবির মিয়া, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবরসহ পাঁচজনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় মামলা করেছেন। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমির বাড়ি রায়পুরার পলাশতলী ইউনিয়নের শাহর খোলা গ্রামে। তাঁর বাবা মুদি মালামালের ব্যবসায়ী বাহার উদ্দিন। ছয় বছর আগে একই উপজেলা জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের হাসেম মিয়ার ছেলে কবির মিয়ার সঙ্গে সুমির বিয়ে হয়। তাঁদের দুটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে রিকশা গ্যারেজের মালিক সুমির স্বামী কবির মিয়া যৌতুকের জন্য তাঁর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। বিভিন্ন অজুহাতে যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য সুমিকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। যৌতুক এনে দিতে অস্বীকার করলেই তাঁর ওপর নেমে আসে নির্যাতন। বিভিন্ন সময় সুমি বাবার বাড়ি থেকে কম বেশি ৬০ হাজার টাকা এনে স্বামীর হাতে তুলে দেন।
কিছুদিন আগে কবির মিয়া একটি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এজন্য সুমিকে তিন লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে আনতে বলেন। কিন্তু সুমি যৌতুক আনতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন কবির মিয়া। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার বিকেলে সুমিকে পুনরায় যৌতুক আনতে চাপ দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে কবির মিয়া সুমিকে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করেন। পরে কেচি এনে তাঁর মাথার চুল কেটে দেন। পরে সুমির দেবর চোখের ভ্রু কেটে দেন। এ সময় তাঁর শ্বশুর হাসেম মিয়া হাতে থাকা সিগারেট দিয়ে সুমির দুই হাতে ছ্যাঁকা দেন। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবর মিলে সুমির ওপর নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে সুমি অচেতন হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
অথরা আক্তার সুমি বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবর যৌতুকের জন্য আমাকে নির্যাতন শুরু করেন। ঘর বানানোর জন্য তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু আমার বাবা মুদি দোকান চালিয়ে আমাদের সংসার চালান। এত টাকা পাবেন কোথায়? সেই ভেবে সব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করেছি। কিন্তু আর কত? তাঁরা আমার সন্তান দুটিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়।’
সুমির বাবা বাহার উদ্দিন বলেন, ‘বিয়ে দিয়েছিলাম মেয়ে সুখে ঘর করবে বলে। সুখ তাঁর কপালে হলো না। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর নির্যাতন সইতে হচ্ছে। পাষণ্ডের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়েছি। ঘর নির্মাণের জন্য আবারো তিন লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু আমি কীভাবে দিব? এত টাকা তো আমার নেই।’
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করা হয়েছে। দ্রুত তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’