স্কুলের টাকা আত্মসাৎ, আ. লীগের পৌর মেয়র বরখাস্ত
একটি স্কুলের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করায় শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি আগামী তিন দিনের মধ্যে প্যানেল মেয়র ১-এর কাছে পৌর মেয়রের দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের দায়ের করা এ মামলায় শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর পর থেকে পলাতক থাকায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখা থেকে গতকাল সোমবার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাম চন্দ্র দাস আজ মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সিকে বরখাস্তের একটি চিঠি পাওয়া গেছে। চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীপদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, দুদকের মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ করায় পৌরসভার মেয়রের ক্ষমতা প্রয়োগ পৌরসভা তথা জনস্বার্থের পরিপন্থী। এ কারণে সরকার শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে আব্দুর রব মুন্সিকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর ৩১(১) ধারার বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মো. খলিলুর রহমান বরখাস্তের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ডভুক্ত উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার ৪৩৮ নম্বর খতিয়ানের ২০, ২১, ২৭ ও ২৮ নম্বর দাগের তিন একর ৭১ শতাংশ জমি বিক্রি করা হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী যার সর্বনিম্ন বাজার দর ছিল চার কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকা। এ জমি বিক্রির জন্য আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল ২০১২ সালের ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করেন। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করে।
ওই তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে জে সরদার করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি মাত্র এক কোটি ৫০ লাখ টাকায় জমিটি বিক্রি করে। ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন দাতা হিসেবে জে সরদার করপোরেশনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর ভাই আবদুস সালামের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। দলিলে জমি বিক্রির টাকা বুঝে পেয়ে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয়ের তহবিলে কোনো টাকা জমা দেওয়া হয়নি। দুই মাস ১৮ দিন পর জমি গ্রহিতারা ৭০ লাখ ও ৮০ লাখ টাকার দুটি চেক দেন। তবে ওই চেক দুটি বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হলে চেকের স্বাক্ষরে মিল না থাকায় এবং গ্রহিতার ব্যাংক হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেক দুটি ফেরত দেয়। দুদকের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করে।
গত বছর ৬ আগস্ট দুদকের উপরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক গাজী মো. শামসুল আরেফিন তদন্ত শেষে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সি, বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবদুস সালাম হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আইউব আলী মল্লিক, আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা, বেগম আলফাতুন্নেছা, সুজন সাহা, সংগীতা সাহা, রণজিৎ কুমার সাহা, জমি গ্রহিতা জাহাঙ্গীর আলম ও আবদুস সালামকে মামলায় অভিযুক্ত করে গত ২৮ মে শরীয়তপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে দুদক অভিযোগপত্র দাখিল করে।
৩০ জুন আদালত অভিযুক্তদের উপস্থিতির জন্য দিন ধার্য করেন। অভিযুক্তরা কেউ আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় দুদকের দাখিল করা অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর পর থেকে পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সিসহ অভিযুক্ত ১২ জন পলাতক রয়েছেন।