পেট্রাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে বাংলাদেশিদের দুর্ভোগ
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পুলিশ ইমিগ্রেশনের কাজের ধীরগতির কারণে প্রতিদিন ভারতগামী হাজারো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও তাঁরা জানতে পারছেন না যে কখন সীমান্ত পার হতে পারবেন। এই অপেক্ষমাণ যাত্রীর তালিকায় রয়েছেন ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়া রোগীরাও।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার বাংলাদেশি বৈধভাবে ভারতে যান। আর প্রতিদিনই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। বারবার অভিযোগ করা হলেও ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দুর্ভোগ নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে আসা মায়ারানী দাস বলেন, ‘আর পারছি না। একটানা প্রায় তিন ঘণ্টা একই স্থানে দাঁড়িয়ে আছি। লাইনের লোক যে যেখানে ছিল সেখানে আছে।’
বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, এই পথে প্রতিদিনই যাত্রী বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ অংশে যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি নেই। বেনাপোল ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে ১৬টি ডেস্কে কাজ হয়। ফলে কোনো জটলা বাধে না। কিন্তু ওপারে ডেস্ক কম থাকা, লোকবল সংকট এবং কাজের গতি ধীর হওয়ার কারণে যাত্রীদের কষ্টের সীমা থাকে না।
ঢাকার বাসিন্দা অনিমা ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশ অংশে ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে কোনো কষ্ট হয়নি। খুব দ্রুত কাজ হয়ে গেছে। কিন্তু ভারতে ঢোকার অপেক্ষায় চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ইমিগ্রেশনের বাঁশের খাঁচায় আটকা পড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এত রাতে পাসপোর্টের কাজ সেরে কোথায় যাব? ভারতীয় চেকপোস্টে রাতে থাকতে হবে মনে হয়।’
ভারতীয় অংশে ইমিগ্রেশনের অপেক্ষায় থাকা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের প্রদীপ কুমার টেলিফোনে এনটিভিকে জানান, স্ত্রী, বাচ্চা, বোন ও তাঁদের বাচ্চা নিয়ে দুপুর ১টা থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এতদূর থেকে এসে এমনিতেই ক্লান্ত ছিলেন তাঁরা। এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আরো কাহিল হয়ে গেছেন। কখন ইমিগ্রেশন থেকে ছাড় পাবেন, রাত ৮টায়ও তা বলতে পারছিলেন না তিনি।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্টের প্রধান ফটকে বিজিবি, তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও ইমিগ্রেশন পুলিশকে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি থেকে রক্ষা করতে বারবার লাইন ঠিক রাখতে তাগাদা দেয়। ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাত জেগে আসা যাত্রীদের মুখে মলিনতার ছাপ পড়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলে বাংলাদেশ অংশে।
বেনাপোল চেকপোস্টের কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট সুভাশিস জানান, কাস্টমসে কোনো সমস্যা নেই। তাঁরা শুধু ট্রাভেল ট্যাক্স চেক করে, যাত্রীদের ব্যাগেজ স্ক্যান করে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেন।
বেনাপোল পুলিশ ইমিগ্রেশনের পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান জানান, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনে কোনো সমস্যা নেই। যাত্রীর চাপ বাড়লেও তাদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ১৬টি ডেস্কে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।