‘টাকা কই তোর, আমাদের কিছু টাকা দে’
টাকার জন্য তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে ধারণা করছেন দীর্ঘ দুই মাস ১০ দিন পর ফিরে আসা সাংবাদিক উৎপল দাস।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন দেন উৎপল। পরে বুধবার ভোর ৫টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরার থানাহাটি গ্রামে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজ বাড়িতে ফেরেন তিনি।
উৎপল দাস বলেন, ‘১০ অক্টোবর ধানমণ্ডির স্টার কাবাবের সামনে আমার একটা ফোন আসে। ফোনে আমি কথা বলতেছিলাম যে, এত টাকা আমাকে দিলে আমি কাজটা করতে পারব। আমার মনে হইছে আমার আশপাশে এই বিষয়টা কেউ নোটিশ করছে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম একটি পিকআপ বা মাইক্রো বা ওই জাতীয় কিছু থেকে এসে আমাকে পেছন থেকে চোখে কাপড় বেঁধে নিয়ে যায়। তারপর আমাকে একটি রুমে, জঙ্গলের মতো এলাকায় একটি টিনশেড ঘরে আটকে রাখত। সেখানে ভয়ংকর পরিবেশ ছিল। রাতে শেয়াল ডাকত।’
উৎপল আরো বলেন, “তারা আমার কাছে মাঝে মাঝে টাকা ডিমান্ড করে বলত, ‘তোর তো অনেক টাকা। কার কাছে টাকা চাইছিস। টাকা কই তোর? আমাদের কিছু টাকা দে।’”
আটক অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করা হয়নি বলে জানান উৎপল। তাঁর করা কোনো প্রতিবেদনের সঙ্গে এই অপহরণের সংযোগ নেই বলে ধারণা করছেন তিনি। কারণ, আটক সময়ে এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানতে চাওয়া হয়নি।
অপহরণকারীদের কাউকে চিনতে পারেননি বলেও জানান উৎপল।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, উৎপলকে অপহরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি যদি কোনো আইনি সহায়তা চান তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে।
এদিকে পরিবারের হারানো সদস্যকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত পরিবারের লোকজন। এমন ভাবে আর কারো সন্তান যাতে নিখোঁজ না হয় সেদিকেও নজর রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।
পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজ নামের একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন উৎপল। গত ১০ অক্টোবর মতিঝিলের অফিস থেকে বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তাঁর বাবা চিত্ত রঞ্জন দাস।
গত দুই মাসে উৎপলের খোঁজ পেতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁর সহকর্মী-বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতায় খুঁজে পাওয়া যায় তাঁকে। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাতেই পরিবারের কাছে নরসিংদীতে পাঠায় পুলিশ।