বন্ধ ক্লিনিকে অনুমোদন ছাড়াই প্রসূতির অস্ত্রোপচার!
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বেসরকারি মডার্ন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই অস্ত্রোপচার চলছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে আবার দুই নারী সিজারিয়ানসহ তিনটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, কেশবপুরের অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউল ইসলাম তিন বছর আগে তাঁর স্ত্রী সালমা বেগমের নামে লাইসেন্স নিয়ে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ক্লিনিকটি গড়ে তোলেন। এরপর নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্লিনিক মালিক রবিউল ইসলামকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। সম্প্রতি ওই ক্লিনিকের চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রোপচারে উপজেলার জাহানপুর গ্রামের প্রসূতির মৃত্যু হয়। তার স্বজনরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ প্রশাসনের একাধিক দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন।
সংশিষ্টরা জানান, গত ৯ নভেম্বর ঊর্ধ্বন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যশোর জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিসহ যশোরের সিভিল সার্জন সরেজমিনে ওই ক্লিনিকটি তদন্ত করেন। তদন্তকালে ক্লিনিকটির অব্যবস্থাপনা ও ত্রুটির কারণে কর্তৃপক্ষ এর সব কার্যক্রম বন্ধ করে সিলগালা করেন। এ সময় ওই ক্লিনিকের ২০ রোগীকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর ক্লিনিক মালিক সালমা বেগম তাঁর ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। পাশাপাশি তিনি ক্লিনিকের মালামাল ফেরতের জন্য যশোরের সিভিল সার্জনের কাছেও আবেদন করেন। শর্তসাপেক্ষে গত ২৮ নভেম্বর ক্লিনিকটি খুলে দেওয়া হয়।
এদিকে, মডার্ন ক্লিনিক মালিকের স্বামী রবিউল ইসলাম মডার্ন হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড উৎস ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে অন্য আরেক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। এর ভিত্তিতে গত ১০ ডিসেম্বর যশোরের সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে চিকিৎসক ডা. আবদুর রহিমের নেতৃত্বে একটি দল ওই ক্লিনিকটি পরিদর্শনে আসেন। ওই প্রতিনিধিদল ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে যাওয়ার পর ওই দিন রাতে রবিউল ইসলাম সদ্য অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) কামরুজ্জামানকে দিয়ে মনিরামপুরের বাসিন্দা প্রসূতি হীরা খাতুন, চন্ডিপুর গ্রামের তানজিলা খাতুনের সিজারিয়ানসহ তিনজনের অস্ত্রোপচার করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্লিনিক মালিক রোগীদের অন্য কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি না করে রাত ২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মনিরামপুরে শয়লা গ্রামের আয়ুব আলীর বাড়িতে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ওই ক্লিনিক মালিক লাইসেন্স পাওয়ার জন্যে আবেদন করেছেন। এখনো প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। এ অবস্থায় অস্ত্রোপচার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানূর রহমান বলেন, ওই ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে। সিভিল সার্জনের চিঠি অনুযায়ী তাঁর মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি মুচলেকা দিয়ে এলে ক্লিনিকটি খুলে দেওয়া হয়। এরপরও তিনি যদি মালামাল না সরিয়ে থাকেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ রায় বলেন, ওই ক্লিনিক মালিক নতুন নামে ক্লিনিকটি চালানোর জন্য লাইসেন্স নিয়েছে। সবেমাত্র তা পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শন মানে এই নয় যে, অস্ত্রোপচারের অনুমতি মিলে গেছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।