এমপি কেয়ার ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
হবিগঞ্জের বাহুবলে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ রোববার দুপুর ১২টায় বাহুবল উপজেলা সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বানে উপজেলা সদরস্থ মৌচাক পয়েন্টে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
অবরোধ শুরু হলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাস্তার উভয় পাশে সহস্রাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। অবরোধে আটকেপড়া যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।
বেলা ১টার দিকে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জসীম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম ও বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী ঘটনাস্থলে যান। তারা এমপি কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়ে অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। প্রশাসনের অনুরোধে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। ফলে ঘণ্টা খানেক অবরোধের পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ প্রত্যাহারের পর পরই সমবেত আন্দোলনকারী নারী-পুরুষদের সমন্বয়ে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে অবরোধ শুরুর আগে একই পয়েন্টে অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশ করে সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুছাব্বির শাহিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসকার আলী, যুগ্ম সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী টেনু, সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ফরিদ মিয়া তালুকদার, মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী, জিতু মিয়া, ডা. হারুনুর রশিদ, আয়াজ আলী, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অলিউর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মুশাহিদ আলী, উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি নূরুল ইসলাম নূর, সাধারণ সম্পাদক শেখ সুহেল আহমেদ, উপজলো ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুকুর রশিদ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আলাউদ্দিন, জেলা সাংস্কৃতিক লীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ, ইউপি সদস্য পারভীন আক্তার, সাবেক ইউপি সদস্য নাজমুন নাহার রিতা, রাহিলা আক্তার, আওয়ামী লীগ নেতা রঙ্গু মিয়া, যুবলীগ নেতা ছুরুক মিয়া, আবুল ফজল, হারুনুর রশিদ, আব্দুল হাই, সুজাত, আয়াত আলী, তোফায়েল, ইমরুল, কৃষকলীগের লুৎফুর রহমান ও এসএম শাবাজ প্রমুখ।
গত ১০ নভেম্বর বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারের অদূরে বেদে পল্লীতে সরকারি সহায়তার চেক বিতরণকালে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হবিগঞ্জ-সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় এমপি কেয়া চৌধুরী, নারী ইউপি সদস্য পারভীন আক্তার ও সাবেক নারী ইউপি সদস্য রাহিলা আক্তারসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন।
গত ১৮ নভেম্বর রাতে এ ব্যাপারে একটি মামলা করেন উপজেলার লামাতাসী ইউপির ১ নম্বর (সাধারণ ওয়ার্ড ১, ২ ও ৩) সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য পারভীন আক্তার। মামলায় নবনির্বাচিত বাহুবল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মো. তারা মিয়া ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আলাউর রহমান সাহেদসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
ঘটনার পর থেকে বাহুবল, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, সিলেটসহ দেশ-বিদেশে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ১৬ নভেম্বর সন্ত্রাস-দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়। ধর্মঘট শেষে ২৬ নভেম্বর বাহুবল উপজেলা সদরের মৌচাক পয়েন্টে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। হামলার ঘটনার ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী জানান, এমপি কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।