রাসায়নিক সারের চাপ কমাচ্ছে ‘ভার্মি কম্পোস্ট’
নওগাঁর রাণীনগরে ক্রমশ বাড়ছে কেঁচোর সাহায্যে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব জৈব সারের (ভার্মি কম্পোস্ট) ব্যবহার। এতে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রবণতা যেমন কমছে, তেমনি রক্ষা হচ্ছে পরিবেশ।
একইসঙ্গে এই জৈব সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলনও বাড়ছে। তা ছাড়া কমছে ফসলের উৎপাদন খরচ।
রাণীনগর কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবং উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের বাস্তবায়নে জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্পের (এনএটিপি) আওতায় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছয়টি কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সিআইজি) কৃষক সমিতির ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী চলমান রয়েছে।
প্রত্যেক সমিতিতে সদস্য রয়েছেন ওই গ্রামের ৬০ জন কৃষাণ-কৃষাণী। সমিতির একজন কৃষকের বাড়িতে এই ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচোর জৈব সার উৎপাদন) প্রদর্শনী চালু আছে। সমিতির বাকি সদস্যরা এই প্রদর্শনী থেকে কেঁচোর সার উৎপাদনের যাবতীয় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর কৃষি কার্যালয়ের তরফ থেকে উৎসাহী কৃষকদের থাই কেঁচোর জৈব সার তৈরির ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সরকার উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রদর্শনীর সব উপকরণ কৃষকদের বিনামূল্যে দিচ্ছে।
ভার্মি কম্পোস্ট মানেই কৃষকের বাড়িতে পরিবেশবান্ধব জৈব সারের কারখানা। কৃষকরা পরিবেশবান্ধব এই সার তাদের বিভিন্ন আবাদি জমিতে ব্যবহার করছেন। ফসলের ক্ষেতে তাদের আর আগের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এই সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ছে। সঙ্গে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। সারা বছরই এই সার তৈরি করা যায়। ক্রমেই উপজেলায় এই ভার্মি কম্পোস্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামের কৃষক মাহবুব আলম খাঁন বলেন, তিনি কৃষি কার্যালয়ের উদ্যোগে তাঁর বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করছেন। এ জন্য কৃষি কার্যালয় থেকে তাঁকে থাই কেঁচোসহ প্রদর্শনীর জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ দেওয়া হয়েছে।
মাহবুব আলম জানান, তিনি এই জৈব সার উৎপাদন করে সবজি ও ধানক্ষেতে ব্যবহার করছেন। নিজের ব্যবহারের পর অবশিষ্ট সার সমিতির অন্য কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন তিনি। বহুমুখী উপকারী এই সারের ফলে তাঁর জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে গেছে। তাঁর দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এই ভার্মি কম্পোস্টের প্রকল্প শুরু করেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম গোলাম সারওয়ার জানান, আবাদি জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো এবং কৃষকদের পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করতেই সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে জৈব সার উৎপাদনের এই পদ্ধতিটি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বলে তিনি জানান।
গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘আমরা সব সময় কৃষকদের পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছি। আশা করা যাচ্ছে, এই পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি অল্প দিনের মধ্যেই উপজেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।’