চার শাবকের ঠাঁই হলো বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে
যশোরে উদ্ধার হওয়া সিংহ ও লেপার্ড ক্যাটের চারটি শাবকের ঠাঁই হয়েছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। আজ মঙ্গলবার সকালে খুলনা বিভাগীয় বন্য প্রাণী বিভাগের প্রতিনিধিদল গাজীপুরের সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ওই শাবক চারটি হস্তাস্তর করেন
গতকাল সোমবার যশোরের সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ একটি প্রাডো গাড়ি থেকে দুটি সিংহের এবং দুটি লেপার্ড ক্যাটের শাবক উদ্ধার করে। শহরের চাঁচড়া তল্লাশিচৌকি এলাকা থেকে ওই শাবকগুলো উদ্ধার করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেপার্ড ক্যাট হচ্ছে এক ধরনের চিতাবাঘ। তবে অনেকে একে চিতা বিড়াল নামেও ডাকে।
উদ্ধার হওয়া ওই শাবকগুলোর মধ্যে লেপার্ড ক্যাটের দুটি শাবকই পুরুষ এবং সিংহের একটি পুরুষ ও অপরটি মেয়ে শাবক। সাফারি পার্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শারীরিকভাবে শাবকগুলো দুর্বল। নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে এসব শাবকের পরিচর্যা করা হচ্ছে।
গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান জানান, উদ্ধারের পরই শাবকগুলো বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই সেগুলো গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের উদ্দেশেপাঠানো হয়। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে শাবকগুলোকে সাফারি পার্কে আনা হয়। পরে সকালে খুলনা বিভাগীয় বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মদিনুল আহসান গাজীপুরের সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ওই শাবক চারটি হস্তাস্তর করেন। প্রাথমিকভাবে ওই চারটি প্রাণীর বাজার মূল্য চার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে পুলিশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানান, লেপার্ড ক্যাটের দুটি শাবকের বয়স দেড় মাস। সিংহশাবকগুলোর বয়স আড়াই মাস।
নিজাম উদ্দিন আরো জানান, এসব শাবককে কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। উদ্ধার করা শাবকগুলোকে এখন ফিডারের সাহায্যে প্রতিদিন ছয়বার করে দুধ ও দুই বার করে ছোট টুকরার মাংস খাওয়ানো হচ্ছে। বয়স অনুযায়ী এদের খাদ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। প্রায় ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শাবকগুলোকে এভাবে রাখা হবে। পরবর্তী সময়ে বয়স অনুযায়ী সুস্থ্যতা সাপেক্ষে সাফারী পার্কের নির্দিষ্ট এলাকায় অনুকুল পরিবেশে শাবকগুলোকে অবমুক্ত করা হবে।
‘দেশে সিংহ নেই, লেপার্ড ক্যাটও বিরল’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা মদিনুল আহসান এবং সামাজিক বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় কর্মকর্তা সরোয়ার আলম জানান, ‘জানামতে দেশে সিংহ পাচারের ঘটনা এটাই প্রথম। কারণ, বাংলাদেশে কোনো সিংহ নেই। সিংহের বাচ্চাগুলো বাইরের কোনো দেশ থেকে আনা হতে পারে। তবে তদন্তের পর জানা যাবে এগুলো কোথা থেকে কীভাবে আনা হয়েছে। এ ছাড়া লেপার্ড ক্যাট হলো বিড়াল প্রজাতির চিতা বাঘ। বাংলাদেশে এটি বিরল। কালেভদ্রে দেখা যায় পাহাড়ি অঞ্চলে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের চা বাগান এলাকায় এবং ভারতের মেঘালয়, আসাম ও মিজোরাম অঞ্চলে দু-একটির দেখা মেলে। অনেকে এ প্রাণীটিকে ‘চিতা বিড়াল’ নামেও চেনে।
‘ভারতে পাচার হচ্ছিল’
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ‘ভারতে পাচারের জন্য সিংহ ও লেপার্ড ক্যাটের চারটি শাবক ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছিল। এ গোপন সংবাদ পেয়ে সোমবার বেলা ১১টার দিকে যশোরের চাঁচড়া এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে একটি প্রাডো গাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় ওই গাড়িতে দুটি কাঠের বাক্সে লুকিয়ে রাখা শাবকগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় দুজনকে তাঁদের ব্যবহৃত গাড়িসহ আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বশিকুড়া চকপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান বাবু (৩২) ও নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বকুলনগর গ্রামের রানা ভূঁইয়া (২৮)। এ ঘটনায় যশোর কোতয়ালি থানায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আনিসুর জানান, আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ঢাকার উত্তরা থানার ফায়েদাবাদ এলাকার জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি দুটি বাক্সে ভর্তি ওই শাবক চারটি তাঁদের কাছে দেয়। যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের ইদ্রিস নামের এক ব্যক্তির কাছে সেগুলো পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল।