‘বিরল’ রোগে আক্রান্ত রাজশাহীর স্বর্ণালী
মুক্তামণির মতো ‘বিরল’ রোগে আক্রান্ত আরেক কিশোরীর সন্ধান পাওয়া গেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের টেগাটাপাড়া গ্রামে। ১২ বছরের স্বর্ণালীর ডান হাতে দেখা দিয়েছে বিরল রোগ। জন্মের সময় ছোট কালো দাগ থেকে এখন পুরো হাতেই ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। এ নিয়ে চরম বেকায়দায় ও মানসিকভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার বাবা-মা।
স্বর্ণালীর বাবা আবদুল মান্নান পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজলোর দাওকান্দি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। মা রুমা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই বোনের মধ্যে স্বর্ণালী ছোট। সে স্থানীয় নোনামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ে।
স্বর্ণালী জানায়, স্কুলে গেলে তার পাশে অন্যরা বসতে চায় না। তাকে দেখে সহপাঠীরা হাসাহাসি করে। এ জন্য প্রায় তার স্কুলে যাওয়া হয় না। শিক্ষকরা তাকে ভালোবাসলেও ক্লাসে তার ভালো লাগে না। তবে লেখাপড়া করার ইচ্ছে তার।
স্বর্ণালীর বাবা জানান, জন্মের পর থেকেই স্বর্ণালীর হাতে কালো দাগ ছিল। আস্তে আস্তে তা গোটা হাতে ছড়িয়ে পড়েছে। বিরল এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই ভেবে এতদিন তারা স্বর্ণালীকে ডাক্তার দেখাননি। পত্রপত্রিকায় মুক্তামণির রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে খবর প্রকাশের পর সাহস জেগেছে আবদুল মান্নানের। এ রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে, এ আশায় তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে। তবে অস্ত্রোপচার বাবদ যে টাকার হিসাব চিকিৎসকরা দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই জোগাড় করা সম্ভব নয় স্বর্ণালীর বাবা-মায়ের।
চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে স্বর্ণালীর মা রুমা বেগম ও বাবা আবদুল মান্নান জানান, মুক্তামণির হাতে যে বিরল রোগ, তাঁর মেয়ের হাতেও একই রোগ বাসা বেঁধেছে। ক্রমেই হাত মোটা ও ভারী হয়ে যাচ্ছে। হাতে ছোট ছোট গুটিগুলো মাংসপিণ্ডের মতো বেড়ে উঠছে। ডান হাতের পুরোটাতেই এখন এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে মাংসপিণ্ড থেকে পুঁজ বের হয়। তখন ব্যথায় কাতর হয়ে ওঠে স্বর্ণালী।
স্বর্ণালীর মা রুমা বেগম জানান, মেয়ের বয়স যখন চার বছর ছিল, তখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেখানো হয়েছিল। সে সময় চিকিৎসক একটি মলম দিয়েছিলেন। সেটি লাগানো হলেও রোগ কমার কোনো লক্ষণ তাঁরা দেখেননি। বরং দিন দিন বাড়তে থাকে এ রোগ। অজ্ঞাত ও বিরল রোগ জেনে তাঁরা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এরপর স্বর্ণালীকে আর চিকিৎসক দেখাননি তাঁরা। কিছুদিন আগে পত্রিকা ও টেলিভিশনে মুক্তামণির খবরের পর তাঁরা মিলিয়ে দেখেন মুক্তামণির মতোই স্বর্ণালীর হাতে একই রোগ বাসা বেঁধেছে। এরপর আবার আশা নিয়ে ছুটে যান আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। এবার তাঁরা রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা নাজনীনকে দেখান। তিনিও স্বর্ণালীর হাত দেখে বিরল রোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অবশ্য এ চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অস্ত্রোপচারের। তবে টাকার কাছে পরাস্ত হয়েছেন বাবা-মা। এখন মেয়েকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁদের।
স্বর্ণালীর বাবা-মা জানান, মেয়ে যত বড় হচ্ছে, ততই বাড়ছে রোগের পরিধি। এ নিয়ে তাঁরা চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মুক্তামণির চিকিৎসা যেভাবে হয়েছে, তাঁর মেয়ে স্বর্ণালীর চিকিৎসাও সেভাবে হবে। প্রয়োজন শুধু সহায়তা। এ জন্য তিনি সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন।
এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি মুক্তামণির কয়েক দফা সফল করেছেন চিকিৎসকরা। তার অবস্থা ভালোর দিকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।