ঋণের বোঝা নিয়ে দম্পতির ‘আত্মহত্যা’
মন্দিরের পাশেই কুঁড়েঘরে থাকতেন পুরোহিত স্বপন দে ও তাঁর স্ত্রী ঝিনু রানী দে। মন্দির দেখাশোনাই ছিল কাজ। ছেলেকে প্রতিষ্ঠা ও মেয়ের বিয়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে টাকা ধার করতে হয় ওই দম্পতিকে।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ফকিরখীল এলাকায় মা মন্দেশ্বরী মন্দিরে ওই দম্পতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মন্দিরের পাশেই থাকতেন স্বপন ও ঝিনু।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের দাবি ঋণের টাকা দিতে না পারায় আত্মহত্যা করেছেন ওই দম্পতি।
পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আ হ ম মাহাবুবুল হক এনটিভি অনলাইনকে জানান,পুরোহিত স্বপন দে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন।
ওই এলাকার মানুষই বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কাছ থেকে ঋণ তুলে ওই দম্পতিকে দিয়েছেন। যারা ওই দম্পতিকে ধার দিয়েছেন তাঁরাও দরিদ্র মানুষ। এখন উভয়ের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর এসব মানুষ মন্দিরে এসে কান্নাকাটি করছেন। ভেবে পাচ্ছেন না এ ঋণ কীভাবে শোধ করবেন।
লাশ উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম শহরে থাকা পুরোহিতের ছেলে মিঠু দে কে খবর দেওয়া হয়। তিনি শহরের রেয়াজউদ্দিন বাজারে ব্যবসা করেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুব।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল হোসেন জানান, স্বপন দের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে বিবাহিত। ছেলে শহরে থাকে। ওই দম্পত্তি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। প্রাথমিকভাবে অন্য কোন আলামত পাওয়া যায়নি। দেনা শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন।
পুলিশ জানায়, ফকির খিল গ্রামে মা মন্দেশ্বরী মন্দিরটি ২০১০ সালে নির্মান করে সেখানে বসবাস করেন স্বপন দে। মন্দিরের পাশে একটি কুঁড়েঘরে থাকতেন পরিবার নিয়ে। ছেলেকে প্রতিষ্ঠা, মেয়ের বিয়ে, মন্দির নির্মাণ, নিজের পরিবারের খরচ সহ নানা ভাবে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন স্বপন দে। মন্দিরে পূজা দিতে আসা লোকজন থেকে বেশী ঋণ গ্রহন করেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে এসব ঋণ পরিশোধ করার কথা। মন্দিরে পুজো দিতে আসা দর্শনার্থীদের টাকা দিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতেন স্বপন দে। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে বেশী কষ্টে আছে পরিবারটি। এ সময়ে মন্দিরে আসা লোকজনের সংখ্যাও কমে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ দাশের স্ত্রী বেবী দাশ জানান, পুরোহিত স্বপন দে তাঁর কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। তিনি একটি এনজিও থেকে এ টাকা ঋণ নিয়ে পুরোহিত কে দিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে এ টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ওই দম্পতির মৃত্যুর পর কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বেবী দাশ।
একইভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এসব টাকা ধার করেছেন বলে জানান বেবী দাশ।
ধার দেওয়া লোকজন জানান, মন্দিরের পুরোহিতকে বিশ্বাস করতেন। তাই নিজের কাছে না থাকায় এনজিও থেকে অধিক সুদে টাকা ধার দিয়েছেন।