মনের চোখে দেখব মায়ের মুখ, বাংলার রূপ
ফুল, পাখি, পাহাড়, নদীসহ সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের রূপ ও মায়ের মুখ দেখতেন সরকারি তিতুমির কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। উপভোগ করতেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তার কাছে পুরো পৃথিবীই এখন অন্ধকার। সিদ্দিকুর জানালেন, এখন মনের চোখ দিয়েই দেখব মায়ের মুখ, পৃথিবীর সৌন্দর্য।
পুলিশের ছোড়া কাঁদানো গ্যাসের সেলের আঘাতে চোখ হারানো সিদ্দিকুর রহমান সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে টেলিফোন অপারেটর পদে নিয়োগ পেয়েছেন। আগামী ১ অক্টোবর তিনি কর্মস্থলে যোগ দেবেন। আজ বুধবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিদ্দিকুরের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর সিদ্দিকুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল মনে। সব মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। তারপরও মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি। এরচেয়েও বড় ক্ষতি হতে পারত।’
চাকরি প্রাপ্তির বিষয়ে মায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে আজ সন্ধ্যায় সিদ্দিকুর রহমানকে ফোন করলে সিদ্দিকুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চোখ হারানোর পর মা আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহস জুগিয়েছেন। মনে সাহস রাখতে বলেছেন। সেই সঙ্গে ধৈর্য ও মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে উপদেশ দিতেন। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রত্যেক মায়ের কামনা থাকে।’
সিদ্দিকুর বলেন, আপনারা জানেন আমার বাবা বেঁচে নেই। মাই হলেন সব। কাজেই মাকে সন্তুষ্ট রাখার সব চেষ্টাই আমার থাকবে।
আপনি তো এখন চোখে দেখেন না। এ অবস্থায় কীভাবে সবকিছু সামলে নেবেন। জানতে চাইলে সিদ্দিকুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চোখ ছাড়াই আমাকে বাকি জীবন বাঁচতে হবে, এ ধরনের একটি মানসিক অবস্থা আমার তৈরি হয়ে গেছে। কর্মক্ষেত্রে আশা করছি কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। সবার সহযোগিতায় আমি নিজেকে তৈরি করে নিতে পারব।’
সিদ্দিকুর বলেন, ‘চোখে না দেখলেও মন দিয়ে মায়ের মুখ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুভব করি। মন দিয়েই মায়ের মুখ ও বাংলার রূপ আমি দেখব।’
পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত ২০ জুলাই শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে চোখে গুরুতর আঘাত হন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। পরে তাঁকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর ডান চোখে আলো ফেরার সম্ভাবনা নেই এবং বাম চোখের অবস্থাও ভালো না বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের তত্ত্বাবধানে সিদ্দিকুরকে ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করেও সিদ্দিকুরের চোখে আলো ফেরেনি।