রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে বিএনপিকে বাধা, আটকাল ২২ ট্রাক
মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর হাতে ত্রাণ তুলে দিতে পারেনি বিএনপি। রোহিঙ্গাদের জন্য আনা ত্রাণবাহী ২২টি ট্রাক আটকে দিয়েছে পুলিশ। জব্দ করেছে ট্রাকগুলোর চাবি।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশের একটি দল ট্রাকগুলোর আশপাশে অবস্থান নিয়ে এসব ঘটনা ঘটায়।
বাধা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কক্সবাজারে ত্রাণ দিতে আসা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে প্রশাসন বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দিলেও দুপুরে জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তখন ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য বিএনপির ত্রাণ তৎপরতা দায়সারা গোছের। তিনি বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন দেশের বাইরে। সে অবস্থায় দলের মহাসচিব প্রধান নেতা। তিনি কিন্তু এই ত্রাণ দলের সঙ্গে আসছেন না। এটাই আমি বলতে চাই, এই একটা দায়সারা ব্যাপার। এটা লোকদেখানো প্রতারণা ছাড়া এই ত্রাণ টিম আর কিছুই নয়—এটাই আমরা বলতে চাই।’
প্রায় একই সময় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে পানি ঘোলা না করে তাদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারা শুধু সমাবেশে বক্তৃতা না দিয়ে দয়া করে সেখানে যান, রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান।’
বিএনপি নেতারা জানান, উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিতে মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কক্সবাজার পৌঁছায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। রাতভর ২২টি ট্রাকে ত্রাণ সামগ্রী ভরেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ট্রাকগুলো আজ সকাল থেকে শহরের শহীদ মিনার রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে পুলিশের একটি দল ট্রাকগুলোর আশপাশে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ২২টি ট্রাকের চাবি জব্দ করে।
ত্রাণবাহী ট্রাকের পাশে অবস্থান নেওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুবকর জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কোথাও যেতে না দিতে উপরের নির্দেশনা রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, পুলিশ জানিয়েছে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ত্রাণবাহী গাড়ি কোথাও যেতে পারবে না। এর পরই জেলা বিএনপির সভাপতি উখিয়া টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ও সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। কিন্তু জেলা প্রশাসকসহ অন্যরা বাইরে থাকায় দেখা করা সম্ভব হয়নি।
সরেজমিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়নি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘ব্যক্তি বলেন, সংস্থা বলেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে গেলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দিতে হবে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ত্রাণ দেওয়া যাবে না।’
কক্সবাজারে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন : আজ বেলা ৩টার দিকে কক্সবাজার জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি একটা জনমত তৈরি করল, সেই জনমত তৈরি করার ফলে আজকে আওয়ামী লীগ এখানে আসতে বাধ্য হয়েছে। এই সরকার এখানে আসতে বাধ্য হয়েছে। আজকে আমাদের না যেতে দেওয়ার কারণ হলো-এক নম্বর হলো : এত বড় ত্রাণের বহর নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল কক্সবাজার আসে নাই, বিএনপি ছাড়া। এটা দেখে তারা একটা অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। এখন যদি বলেন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব এসেছেন। ওনারা তো মন্ত্রী, সরকারের পক্ষ থেকে এসেছেন। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিএনপির আগে কেউ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায় নাই। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আগে কেউ, বাংলাদেশের কেউ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলে নাই। এই রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে নাই। এই কারণে তারা আজকে আমাদের বাধা দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও ড্যাবের সভাপতি এ জে এম জাহিদুরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুলের তাৎক্ষণিক নিন্দা: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নিয়ে যাওয়া বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাক পুলিশ আটকে দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল।
মিলনায়নটিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দশম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা চলছিল। এ সময় কক্সবাজারে ত্রাণের ট্রাক আটকে দেওয়ার কথা সেখান থেকে টেলিফোনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ কথা জানতে পেরে আলোচনা সভা চলাকালেই মাইক্রোফোন নিয়ে নিজের নির্ধারিত বক্তব্যের আগেই এই প্রতিবাদ জানান দলটির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো শুধুই আইওয়াশ। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে চায় না বলেই সরকার এমন জঘন্য কাজটি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।