পদ্মায় ৩ লঞ্চডুবি, স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙনে পন্টুন ছিঁড়ে ডুবে যাওয়া তিনটি লঞ্চ আজ মঙ্গলবারও উদ্ধার হয়নি। লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১৫ জনকে উদ্ধার করা যায়নি। তবে তাদের উদ্ধারে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। তবে পদ্মা নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্ন হচ্ছে। এর আগে গতকাল সোমবার বৈরী আবহাওয়া ও স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।
এদিকে আজ সকাল ৯টার দিকে পদ্মার সুরেশ্বর ঘাট থেকে সজল পাল (২৫) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। ওই যুবক খুলনার রুপসা থানাধীন পিটাভোগ পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মৌচাক লঞ্চে নড়িয়ার লুনশিং গ্রামের মোহাম্মদ আলী তাঁর স্ত্রী পারভীন বেগম (২৮), শাশুড়ি ফকরন বেগম (৫০) ও ছয়দিন আগে জন্ম নেওয়া মেয়েকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। লঞ্চটি ঘাটে পৌঁছার পর যাত্রীরা নেমে যায়। তবে ভোর হওয়ার আশায় পরিবার নিয়ে লঞ্চেই অপেক্ষা করছিলেন মোহাম্মদ আলী। এ সময় হঠাৎ পদ্মাপাড়ের একটি বিরাট অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে। এতে পানির তোড়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ সময় ঘাটে নোঙর করা মহানগর ও নড়িয়া-২ নামের লঞ্চ দুটিও ডুবে যায়। পরে মোহাম্মদ আলীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অন্যরা এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
পুলিশের করা তালিকায় এখনো নিখোঁজ ১৫
নিখোঁজ যাত্রীরা হলেন নড়িয়ার লুনশিং গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী পারভীন বেগম (২৮), শাশুড়ি ফকরন বেগম (৫০) ও ছয়দিনের নবজাতক।
এ ছাড়া লঞ্চের নিখোঁজ কর্মীরা হলেন রবিন সরদার (২০), লিটন শেখ (২৫), মানিক মাতবর (৩৫), বশির (২৯), রফিক (৫০), জাকির (৪৫), জয় (১৯), পলাশ (২০), সাদেক (২৫), সজল তালুকদার (৩৮), শাহ আলম (৩৫) ও সালাউদ্দিন (৩০)। তবে আজ উদ্ধার হওয়া সজল পালের নাম পুলিশের নিখোঁজের তালিকায় ছিল না।
নৌপুলিশের সুরেশ্বর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জয়নাল আবেদিন বলেন, আজ সকাল ৯টার দিকে নড়িয়ার সুরেশ্বর এলাকার পদ্মা নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় জেলেরা। পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। লাশটি উদ্ধারের পর তাঁর পকেটে থাকা মুঠোফেনের নম্বর দেখে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, লাশটি সজল পালের।
সজল পালের ভগ্নিপতি খুলনার সোনাডাঙা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক পাল মুঠোফোনে জানান, কাউকে কিছু না বলে সজল গত ৮ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তাঁর মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের একটি টাওয়ার পাওয়া যায়। গত ৯ আগস্ট লৌহজং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আজ নড়িয়া থানার পুলিশের পাঠানো ছবি দেখে তাঁর চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। পোশাক ও সঙ্গে থাকা ফোনের সিম কার্ড দেখে ধারণা করা হচ্ছে, লাশটি সজলের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্মপরিচালক (উদ্ধার) ফজলুর রহমান বলেন, ডুবে যাওয়া তিনটি লঞ্চ ও নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য উদ্ধার যান প্রত্যয় সোমবার বিকেল থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুলারচর এলাকায় অবস্থান করছে। কিন্তু স্রোতের কারণে অভিযান চালাতে পারেনি। আজ সকালে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। একটি লঞ্চ দুলারচর এলাকায় শনাক্ত করা গেছে। কিন্তু স্রোতের কারণে ডুবুরিরা ওই লঞ্চের সঙ্গে কোনো দড়ি বেঁধে রাখতে পারেননি।