২৮ শিশুকে নর্দমার পানি খাওয়ালেন শিক্ষিকা!
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া না পারায় চতুর্থ শ্রেণির ২৮ শিশু শিক্ষার্থীকে নর্দমার পানি খাইয়েছেন এক শিক্ষিকা। গত বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষিকার নাম শাহানাজ পারভীন হাওয়া। তিনি ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির মেয়ে।
ওই শিক্ষিকাকে অপসারণ ও তাঁর বিচারের দাবিতে আজ শনিবার বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির মেয়ে ও সহকারী শিক্ষিকা শাহানাজ পারভীন গত বুধবার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন। ক্লাসে ৩১ জন শিক্ষার্থী ছিল। এ সময় লামিশা, বোরহান ও নীরব ছাড়া বাকি কেউ ক্লাসের পড়া দিতে পারেনি। পড়া না পারায় শাস্তি হিসেবে শাহানাজ ২৮ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের পেছনে থাকা নর্দমার পানি খাওয়ান। ওই নর্দমায় শিক্ষার্থীদের পয়োনিষ্কাশনের বর্জ্যসহ আশপাশের ময়লা এসে জমা হয়। এ ছাড়া দুই সপ্তাহ আগে একটি মরা কুকুরও ওই নর্দমায় ফেলা হয়।
ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা লজ্জায় প্রথমে কাউকে না বললেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে গত শুক্রবার বিষয়টি তাদের অভিভাবকরা জানতে পারেন। আজ বিদ্যালয় খুললে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা স্কুলে অবস্থান নেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ ও বিচারের দাবি জানান।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদের বাবা মান্নান হাওলাদার বলেন, ‘গত বুধবার রাত থেকে আমার ছেলে পুরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছেলেকে সুস্থ করতে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে আমার ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। পরে জানতে পারি, স্কুলের শাহানাজ ম্যাডাম জাহিদকে নর্দমার ময়লা পানি খাইয়েছে।’
চতুর্থ শ্রেণির আরেক ছাত্র সামসুজ্জোহার বাবা আনোয়ার হোসেন, কাঞ্চনমালার বাবা মজিবর শেখ, টিয়া আক্তারের বাবা টিটু চৌকিদার ও আসিফের বাবা হেলাল চৌকিদার বলেন, শাহানাজ ম্যাডাম আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের পচা পানি খাইয়ে জঘন্য অপরাধ করেছেন। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে দুদিন ধরে কিছুই খেতে পারেনি। সুস্থ করার জন্য শুধু স্যালাইন খাইয়েছি। আমাদের সন্তানের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বোরহান বলে, ‘লামিশা, নীরব ও আমি পড়া পেরেছি। তাই আমাদের পচা পানি খেতে হয় নাই। ম্যাডামের কথামতো আমি জগ ভরে নর্দমা থেকে পানি আনি। প্রথমে আসিফকে এক গ্লাস পচা পানি খাওয়ানো হয়। এরপর বাকিদের খাওয়ানো হয়।’
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শিক্ষিকা শাহানাজ পারভীন হাওয়া সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘আমি শিশুদের পচা পানি খাওয়ানোর কথা বলেছি। কিন্তু খাওয়াই নাই।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর মাদবর বলেন, ‘পড়া না পারার জন্য শিশুদের এ ধরনের শাস্তি দেওয়া জঘন্য অপরাধ। এলাকার মুরব্বিরা বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষিকা শাহানাজ পারভীন হাওয়ার বাবা ইউনুস মৃধা বলেন, ‘আমার মেয়ে কাজটা ঠিক করে নাই। আমি এলাকার লোকজন নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসা করব।’