পুরোনো রেলকোচ সাজছে নতুন সাজে
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঘরমুখী মানুষের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়মিত কোচের সঙ্গে বাড়তি ১৩৮টি কোচ যোগ করা হচ্ছে।
প্রতিবছরই ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে এবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় রেলের ওপর চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে কারণে যাত্রীর চাপ সামাল দিতেই বাংলাদেশ রেলওয়ের এই উদ্যোগ।
এ জন্য আন্তনগর কোচের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় অতিরিক্ত কোচ মেরামতের কাজ চলছে জোরেশোরে। নানা সীমাবদ্ধতা ও জনবল সংকট সত্ত্বেও এবার রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৬৫টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত বুধবার পর্যন্ত ২৫টি কোচ রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঈদের আগে ও পরে এসব কোচ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী আন্তনগর ট্রেনের বহরে জুড়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া পরিচালনা করা হবে দুটি স্পেশাল ট্রেন। ট্রেন দুটি চলবে ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-খুলনা রুটে। অতিরিক্ত এসব কোচ চলতি মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে হস্তান্তর শেষ হবে।
মধ্য জুলাই থেকে পুরাতন ৬৫টি কোচের মেরামত শুরু হয় সৈয়দপুরের কারখানায়। যথাসময়ে কোচগুলো সরবরাহের উদ্দেশ্যে কারখানায় প্রতিদিন নয় ঘণ্টা বিরতিহীনভাবে কাজ চলছে। কারখানার মঞ্জুরি জনবলের মাত্র ৩৮ ভাগ জনবল ও বিদ্যমান পুরোনো মেশিনপত্র দিয়ে অচল কোচকে সুসজ্জিত করে সচল করা হচ্ছে। এ জন্য কারখানার চারটি শপ বা উপকারখানায় চলছে মেরামতের কর্মযজ্ঞ। নির্ধারিত সময়ে মেরামতকাজ সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানার ২৯টি শপের শ্রমিক-কারিগর ও প্রকৌশলীরা।
রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের পার্বতীপুর, লালমনিরহাট, ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও খুলনা রেলওয়ে ডিপোয় রাখা মেরামতযোগ্য পুরাতন কোচ সংগ্রহ করে নেওয়া হচ্ছে সৈয়দপুর কারখানায়। সেখানেই সচল করা হচ্ছে এগুলোকে। কোচ মেরামত করতে রেলওয়ে সরঞ্জাম বিভাগের মজুদ মালামাল ও রেল কারখানায় তৈরি করা নিজস্ব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ জন্য দৈনিক কর্মঘণ্টার সঙ্গে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা শ্রম বেশি দিচ্ছেন শ্রমিক-কারিগররা। অবশ্য এ জন্য ওভারটাইমও পাচ্ছেন তাঁরা।
মোট ৬৫ কোচের মধ্যে ৪০টি ব্রডগেজ ও ২৫টি মিটারগেজ পথে চলতে সক্ষম।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের জন্য পশ্চিম রেলওয়ের প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনে বৃদ্ধি করা হবে কোচের সংখ্যা। এ ছাড়া ঈদের আগে ও পরে পরিচালনা করা হবে দুটি স্পেশাল ট্রেন। ফলে ঈদ যাত্রায় পশ্চিম রেলওয়ের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ৪০ হাজার যাত্রী রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা পাবেন।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, গণপরিবহন হিসেবে রেলওয়ের গৌরব ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোচ মেরামতের কাজ করছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। তবে কাঁচামালের সীমাবদ্ধতা ও জনবল সংকট থাকলেও কাজ চলছে জোরেশোরে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ওয়ার্কস ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম জানান, সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ট্রেনযাত্রার চাহিদা তৈরি হওয়ায় পশ্চিম রেলওয়ের পক্ষ থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় প্রতিবছর দুই ঈদে অতিরিক্ত রেল কোচ মেরামত করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। রেলওয়ে কারখানার কর্মীরা জোরেশোরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ঈদযাত্রায় এই প্রস্তুতির সুফল যাত্রীরা পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।