তিস্তাপাড়ে এখন কেবলই দুর্ভোগ
তিস্তা নদীর পানি কমেছে। কিন্তু সেটা নিয়ে স্বস্তির কোনো কারণ নেই। তিস্তাপাড়ে বাঁধের ওপর পলিথিনের বানানো ঘর, কুঁড়েঘরগুলোতে স্বস্তি নেই। নেই খাবার পানি, পর্যাপ্ত খাবার। ত্রাণ যা যায় তা দিয়ে হয় না। তিস্তাপাড়ে এখন কেবলই দুর্ভোগ।
নীলফামারীতে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তিস্তার পানি নেমে গেলেও বসতভিটা হারিয়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নেয়।
আজ বৃহস্পতিবার তিস্তাপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার ভাঙন ও পানিবন্দি পরিবারের সদস্যরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাঁচ শতাধিক পরিবার ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাইড বাঁধে তিস্তার ডান তীরে পলিথিন ও কুঁড়েঘর বানিয়ে কোনোমতে জীবন-যাপন করছে। পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটসহ নানা রোগবালাই। বন্যাকবলিত এলাকায় টিউবঅয়েল ও নিরাপদ পায়খানার সংকটসহ দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি-কাশি, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ। বিশেষ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এসব পরিবারের সদস্যরা জানান, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা নদীভাঙনের কবলে পড়েন। সব কিছু নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন কোনোমতে বেঁচে আছেন তাঁরা। স্বজনদের একজন বলেন, ‘কখনো খেয়ে কখনো বা না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। সরকারের পক্ষ থেকে যা ত্রাণ পাচ্ছি তা দিয়ে তো সংসার চলে না। সংসারে সদস্য অনেক কিন্তু ত্রাণ যৎসামান্য, এ দিয়ে কি আর দিন চলে?’
নীলফামারীর ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর ও পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের তিস্তা রক্ষাবাঁধের প্রায় এক হাজার মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া মসজিদপাড়া গ্রামের মসজিদসংলগ্ন বাঁধটি ভেঙে গিয়ে একাধিক বাড়িঘরের অবকাঠামো পানির প্রবল স্রোতে তলিয়ে যায়।
তেলির বাজারের উত্তর ও পূর্বে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে। দ্রুত তিস্তার পানি নেমে যাওয়ায় এখন ভাঙন-আতঙ্কে আছে তিস্তাপারের মানুষ।
নীলফামারীর সিভিল সার্জন রঞ্জিত কুমার বর্মণ বলেন, ‘বন্যায় প্লাবিত ও নদীভাঙন এলাকায় জরুরি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছে এবং মনিটরিং করা হচ্ছে।’ টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘ভাঙনকবলিত বাঁধটি দ্রুত সংস্কার করা হবে। বাঁধে আশ্রয় গ্রহণকারীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামে ১৫০ পরিবারকে আট কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি তেল, ২৫০ গ্রাম গুড়, এক কেজি চিঁড়া, এক কেজি লবণ ও দেড় লিটার বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেন রংপুর বিজিবি ৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহফুজ-উল-বারী।