রোগীর পেটে গজ রেখেই সেলাই করলেন চিকিৎসক!
মাদারীপুরে কে আই ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক চিকিৎসক রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রুবি আক্তার নামের ওই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন।
রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাইকারীদের শাস্তির দাবি করেছে মাদারীপুরে সচেতন নাগরিক সমাজ।
রোগীর কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে এবং হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের সাগর খানের স্ত্রী রুবি আক্তার তিন মাস আগে হাসপাতালে ভর্তি হন। কে আই ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক শিমুল আক্তার তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। এ সময় একটি ছেলে সন্তান জন্ম দিলেও নবজাতকটি মারা যায়।
রুবির স্বামী সাগর খান বলেন, চিকিৎসক শিমুল আক্তার অপারেশনের সময় ভুলবশত রুবির পেটের মধ্যে গজ রেখে সেলাই করে দেন। এরপর রুবির অবস্থা গুরুতর হলে ওই হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পরেও রোগীর পেটের ব্যথা কমছিল না। গত ১০ আগস্ট মাদারীপুরের চৌধুরী ক্লিনিকের চিকিৎসক দিলরুবা ফেরদৌসের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে তিনি পরীক্ষার পরামর্শ দেন।
সাগর খান আরো বলেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর পেটের মধ্যে গজ থাকার বিষয়টি ধরা পরে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে কে আই ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত রোগীকে কিছু টাকা দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। বিষয়টি কারো কাছে না জানাতেও চাপ দেওয়া হয়।
কে আই ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক শিমুল আক্তারের বক্তব্য জানতে গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার একাধিকবার ওই হাসপাতালে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে চৌধুরী ক্লিনিকের চিকিৎসক দিলরুবা ফেরদৌস বলেন, ‘রুবির পেটের ভেতর কিছু একটা ছিল সেটা তো আলট্রাস্নোগ্রাম প্রতিবেদনে আছে। ওই চিকিৎসক (শিমুল আক্তার) আমার কলিগ, তাই আর বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না।’
কে আই ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়য়গনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুয়েল ব্যাপারি বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা তো আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। আমরা ওই রোগীর সমস্ত চিকিৎসা খরচ দিয়েছি। কাজ করলে ভুল হতেই পারে।’
জুয়েল ব্যাপারি আরো বলেন, ‘সেই রোগী ফরিদপুরে চিকিৎসা নিয়েছে, আমাদের এখানেও চিকিৎসা করিয়েছি। কোথায় ভুল চিকিৎসা করছে, এটা তো নিশ্চিত নয় কেউ। আমরা ভুল চিকিৎসা করাইনি। তবু রোগী অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় চিকিৎসার সব খরচ আমরা দিয়েছি।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার দাস বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমরা তদন্ত করে দেখব। তদন্তে যদি কে আই ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওই চিকিৎসক দোষি প্রমাণিত হন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।