নোয়াখালীতে যৌতুক না পেয়ে এমন নির্যাতন!
কিল-ঘুষি দিয়ে স্ত্রী পিয়ানা সুলতানা তন্বীর (২৪) ঘুম ভাঙান স্বামী আবদুর রহিম রুবেল (২৮)। এরপর ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করেন স্ত্রীকে। নির্যাতনের একপর্যায়ে পানি খেতে চান তন্বী। রুবেল পানিতে হলুদ আর মরিচ মিশিয়ে খেতে দেন। এ পানি খেয়ে চিৎকার করলে ইলেকট্রিক শক দেন স্ত্রীকে।
ঘর থেকে বের হয়ে দৌড় দেন গৃহবধূ তন্বী। তাতেও ক্ষান্ত হননি রুবেল। স্ত্রীর মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন। অচেতন হয়ে পড়েন তন্বী।
গতকাল রোববার রাতে স্ত্রী তন্বীর ওপর নির্যাতন করেন রুবেল। নোয়াখালী সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বাড়ি থেকে বের হন তন্বী। তিনি বর্তমানে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানেই এই প্রতিবেদকের কাছে নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন।
২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের উপদী লামচি গ্রামের বাসিন্দা তন্বীর সঙ্গে লক্ষ্মীনারায়ণপুরের রুবেলের বিয়ে হয়।
তন্বী নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেছেন। তাঁদের চৈতি (৪) ও আহিল (২) নামে দুটি সন্তান আছে। বিয়ের পর তন্বীর বাবা-মা মারা যান। তন্বীর নামে কিছু জমি আছে। ওই জমি বিক্রি করে টাকা আনার জন্য চাপ দেন রুবেল।
তন্বী জানান, রুবেল মাইজদী সদরের নোয়াখালী সুপার মার্কেটে প্রসাধনীর ব্যবসা করেন। বদচরিত্রের কারণে ও মাদকাসক্ত হওয়ায় দিন দিন তাঁর ব্যবসায় পতন ঘটে। রুবেল আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করবেন বলে পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে কয়েক মাস থেকে তন্বীকে চাপ দিতে থাকেন এবং মানসিক যন্ত্রণা দিতে থাকেন।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ জানান, গত রোববার তাঁর স্বামী রুবেল অবুঝ দুটি সন্তানের সামনে তাঁকে ঘুম থেকে উঠিয়ে টাকা আনার জন্য আবার চাপ দিতে থাকেন। এরপর তিনি বাবার বাড়ি যেতে অস্বীকার করায় রুবেল ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মেরে ঘরের মেঝেতে ফেলে দেন। এ সময় রুবেল তাঁর মুখে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করেন। তিনি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু রুবেল তখন তাঁকে হলুদ-মরিচ মিশিয়ে পানি খেতে দেন। এ পানি খেয়ে তিনি আরো জোরে চিৎকার করলে রুবেল তাঁর বাম হাতে ইলেকট্রিক শক দেন এবং তাঁকে মারতে মারতে নগ্ন করে ফেলেন।
তন্বী জানান, এ সময় ঘরে তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি থাকলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। ঘটনার পর তিনি ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলেও তাঁর মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন রুবেল। এর কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। রোববার মধ্যরাতে চেতনা ফিরলে তিনি মেয়ে চৈতিকে রেখে ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে পালিয়ে রাস্তায় চলে আসেন। এক রিকশাওয়ালা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে সুধারাম থানায় নিয়ে আসেন এবং পুলিশের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সম্প্রতি যৌতুকের দাবির ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর নির্দেশে একটি সালিসি বৈঠকে স্ত্রী তন্বীকে আর নির্যাতন করবেন না বলে লিখিত অঙ্গীকার করেছিলেন রুবেল।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তন্বীর শরীর রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে। মেয়েটি একটু সুস্থ হলে আমরা তাঁর কথার ওপর ভিত্তি করে মামলা রুজু করব। এ ছাড়া তাঁর স্বামী রুবেলকে আটক করতে পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। তবে ওই বাড়িতে গিয়ে রুবেলকে পাওয়া যায়নি।’