মেয়র মান্নানের বরখাস্তের আদেশ আবার স্থগিত
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নানকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বরখাস্তের আদেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
এ আদেশের ফলে এম এ মান্নানের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
আজ রোববার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ নিয়ে এম এ মান্নানের বরখাস্ত করার আদেশ তিনবার স্থগিত করা হলো।
এর আগে সকালে মেয়র মান্নানকে বরখাস্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। মেয়র মান্নানের পক্ষে আইনজীবী আবু হানিফ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট জমা দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণের পর গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এম এ মান্নানকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা এম এ মান্নান। পরবর্তী সময়ে নাশকতার এক মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণের পর ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট এম এ মান্নানকে প্রথম বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ২৮ মাস পর মেয়র পদ ফিরে পান মান্নান।
কিন্তু এর পর পরই আরো একটি মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ওই আদেশের বিরুদ্ধেও আইনি লড়াই করেন মান্নান। গত ১৮ জুন পুনরায় পদ ফিরে পান তিনি। কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যে দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণের পর ফের তাঁকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় বিএনপির এ নেতাকে বেশির ভাগ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান দায়িত্ব পালনকালে সিটি করপোরেশনের ত্রাণ ও দরিদ্র তহবিলের আয়গুলো কোনো ব্যাংক হিসাবে না রেখে নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্যাশ ইন হ্যান্ড হিসেবে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার কাছে রাখেন। তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও টাকা গ্রহীতার স্বাক্ষরবিহীন ৯৯৯টি ভুয়া ভাউচার সৃজন করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৯ লাখ এক হাজার ৮৪৮ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ মর্মে দুদক গত বছরের ১২ জুন জয়দেবপুর থানায় মামলা করে। মামলার তদন্তকালে সিটি করপোরেশনের ছয় কর্মকর্তা-কমচারীসহ আটজন সাক্ষী সাক্ষ্য-প্রমাণ দেন। ওই মামলায় তদন্ত শেষে প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুরের বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। পরে ১৮ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি ওই আদালতে গৃহীত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়াকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, যেহেতু অধ্যাপক এম এ মান্নান ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে, যা সিটি করপোরেশনের মেয়রের নৈতিক মানদণ্ড ও ভাবমূর্তির পরিপন্থী। এ অবস্থায় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল ক্ষুণ্ণ হওয়া, সাক্ষ্য-প্রমাণাদি বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রভাবিত হওয়ার যৌক্তিক আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে দিয়ে মেয়রের ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থী এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনসেবায় নিয়োজিত থাকা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয় মর্মে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন মোতাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে।