জয়পুরহাটে ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন বাবা
ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার সাগরামপুর গ্রামের শুকরা সরকার নামের এক কৃষক। আজ শনিবার বেলা ১১টায় জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে শুকরা সরকারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন শুকরা সরকারের ভাগ্নে ক্ষেতলাল পৌরসভার কাউন্সিলর নবীউল ইসলাম লেবু।
শুকরা সরকার অভিযোগ করেন, তাঁর একমাত্র ছেলে হানিফ গত ১২ জুন রাতে নিজের ঘরে মারা যান। বিদ্যুতায়িত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হানিফের স্ত্রী। তবে চিকিৎসক জানান, তাঁর মৃত্যু বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটেনি। তাঁদের ধারণা, হানিফের স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিবেশী যুবকের পরকীয়া সম্পর্কের কারণে স্ত্রীর যোগসাজশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। বিষয়টি তাঁরা পুলিশকে জানিয়ে হানিফের স্ত্রীকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানায়। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি।
শুকরা সরকার বলেন, ‘পুলিশ তাঁদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে। থানায় তাঁরা হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পুলিশ এ ঘটনায় তাঁদের কোনো সহযোগিতা করেনি। বরং হানিফের মৃত্যু নিয়ে তাঁর স্ত্রী মৌসুমীকে যেন কোনো প্রকার হয়রানি করা না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক করে দিয়েছে। এমনকি পুলিশই ওই দিন গ্রামবাসীর রোষানল থেকে স্ত্রী মৌসুমীকে একই উপজেলার খুঞ্জাপাড়া মহল্লায় তাঁর বাবার বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা গণমাধ্যমে তুলে ধরলে হানিফের মৃত্যুর সঠিক বিচার হতে পারে বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
এ সময় আরো ছিলেন হানিফের মা মহিলা সরকার, ভাগ্নে এরফান আলী ও বড় ভাই শাহজাহান আলী সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হানিফ সংসারের অভাব দূর করতে দেড় বছর আগে ইরাকে যান। কিন্তু স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের খবর পেয়ে বিদেশ থেকে গত ২১ মে বাড়ি আসেন। বাড়ি ফেরার পর তিনি ক্ষেতলাল বাজারে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর সাড়ে তিন বছরের একটি মেয়েসন্তানও আছে। বাড়ি ফেরার পর স্ত্রী মৌসুমীর সঙ্গে প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বুলুর অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাগ করে মৌসুমী তাঁর বাবার বাড়ি চলে যান। পরে ফিরেও আসেন। স্বামীর ঘরে আসার দুদিন পর গত ১২ জুন নিজ ঘরে হানিফ ‘রহস্যজনকভাবে’ মৃত্যুবরণ করে।
নিহত হানিফের মা মহিলা সরকার বলেন, হানিফের স্ত্রী মৌসুমীর সঙ্গে প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বুলুর দীর্ঘদিনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাঁদের ওই অনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা যায়নি। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে তাঁদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে।
এ বিষয়ে মৌসুমীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আতাউর রহমান বলেন, ‘ময়নাতদন্তে নিহত হানিফের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ভিসেরা রিপোর্ট পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, এটা হত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর থানায় শুকরা সরকার বাদী হয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। পরে হানিফের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগে নিহত হানিফের বাবার সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওসি বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সত্য নয়।’