পটুয়াখালীতে প্রস্তুত ছিল ৩৩১ আশ্রয়কেন্দ্র, উপস্থিতি কম
ঘূর্ণিঝড়ের খবর পাওয়ার পরেই পটুয়াখালীতে প্রস্তুত রাখা হয় ৩৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র। তবে বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রই ফাঁকা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে।
গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আট উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়। সেই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয় ৩৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে নিম্নাঞ্চল পাঁচ-ছয় ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে- এমন প্রচার চালিয়ে উপকূলের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়। দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। এদিকে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সমুদ্রসৈকত নামতে দেওয়া হয়নি।
জেলার বিদ্যালয়গুলো ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আশঙ্কায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আশ্রয়কেন্দ্রে তালা
উপকূলীয় রাঙ্গাবালী উপজেলার সাগরপাড়ের চরমোন্তাজ ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তালাবদ্ধ ছিল। এতে চরমোন্তাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমোন্তাজ সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও উত্তর চরমোন্তাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সাময়িকভাবে সমস্যায় পড়েন অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ওই তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রই নয়, ইউনিয়নের বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রই কয়েক ঘণ্টা তালাবদ্ধ ছিল। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঠিক তদারকি না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে বসে ছিলাম। পরে কর্তৃপক্ষ এসে তালা খুলে দেয়।’
চরমোন্তাজের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আট নম্বর সংকেত চলছিল। তাই আমরা ঘর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসি। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর আশ্রয়কেন্দ্রের তালা খুলে দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ
ঘূর্ণিঝড় মোরা’র ধেয়ে আসার খবর পেয়ে জেলার উপকূলজুড়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হন। পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ ওই এলাকায় আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত থাকায় লোকজন আরো বেশি আতঙ্কিত হন। উপকূলে দেখা দেয় প্রবল বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়ের খবরে বাঁধভাঙা কলাপাড়ার নিজামপুর, কোমরপুর, সদরপুর, পুরান মহিপুর, চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নাওয়াপাড়া, ব্যুরোজালিয়া, মির্জাগঞ্জ ও রাঙ্গাবালীসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিরাপদ আশ্রয়ে মাছ ধরার ৫০০ ট্রলার
কুয়াকাটা-আলীপুর ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে আছে। মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুরের পোতাশ্রয় শিববাড়িয়া নদীতে প্রায় ৫০০ মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে নোঙর করে।