পাঁচ ‘জঙ্গি’র লাশ নেবে না পরিবার
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেণীপুর গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জঙ্গি আস্তানা’য় পুলিশের অভিযান চলাকালে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত পাঁচ জঙ্গির লাশ নেবে না পরিবার।
অভিযানে নিহত হয়েছেন সাজ্জাদ আলী মিষ্টু (৫০), তাঁর স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), ছেলে আল-আমিন (২০) ও মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭)। কিন্তু তাঁদের কারোরই লাশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন নিহত সাজ্জাদের মা মারজাহান বিবি (৮০)।
গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে উপজেলার বেণীপুর গ্রামের সাজ্জাদ আলীর বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকাল ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের শুরুতেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দেয়াল ধসিয়ে দিতে মাটির তৈরি ওই বাড়িতে পানি দিতে শুরু করেন। এ সময় জঙ্গিরা বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে নারীসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন। এ সময় ওই পরিবারের দুই শিশুকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বেণীপুর গ্রামে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সান ডেভিল’। ঢাকা থেকে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখানে গেলেও আলো-স্বল্পতার কারণে অভিযান শুরু করতে পারেনি। আজ সকাল থেকে বেণীপুর গ্রামে ওই জঙ্গি আস্তানার আশপাশে থাকা পাঁচজনের লাশ ও বোমা উদ্ধার করার কথা রয়েছে।
মারজাহান বিবি বলেন, মানুষ হিসেবে সবার জন্যই মন কাঁদছে। কিন্তু কোনো দেশবিরোধী সন্তানের লাশ গ্রহণ করবেন না তিনি। মারজাহান বিবি মনে করেন, কেউ খারাপ কাজ করলে তাঁর শাস্তি হয়, তাঁর ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা তেমন শাস্তিই পেয়েছে।
মারজাহান বিবি জানান, তিনি লাশ নেবেন কি-না সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁর কাছে এখনো কিছু জানতে চায়নি। তবে জানতে চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেবেন, কারো লাশ তিনি নেবেন না।
বেণীপুরে নিহত জঙ্গি সাজ্জাদ আলীর বাড়ি থেকে মাত্র প্রায় ৫০০ মিটার দূরে তাঁর ছোট ভাই মুক্তার আলীর বাড়ি। এ বাড়িতেই ছেলের সংসারে থাকেন সাজ্জাদের মা মারজাহান বিবি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়েই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মারজাহান বিবি বলেন, বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মাছমারা গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ের সঙ্গে সাজ্জাদের বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পর থেকে সাজ্জাদ তাঁর শ্বশুরবাড়ির পাশেই একটি বাড়ি করে থাকত। মাস চারেক আগে শ্বশুরের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব হয়। এর পর সাজ্জাদ পরিবার নিয়ে গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ী মহল্লায় কিছুদিন ভাড়া থাকে।
ছেলেকে ভাড়াবাড়িতে থাকতে দেখে মারজাহান বিবিই বেণীপুরে মাঠের ভেতর তাঁকে পাঁচ কাঠা জমি দেন বাড়ি করতে। মাস দুয়েক আগে বাড়িটির নির্মাণ শেষ হয়। এরপর সাজ্জাদ পরিবার নিয়ে ওই বাড়িতে ওঠে। দুই মাসে মাত্র দুবার ছেলের বাড়ি গেছেন মারজাহান বিবি। কিন্তু সেখানে অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি বলে তিনি দাবি করেন।
মারজাহান বিবি বলেন, সাজ্জাদ আলীর স্ত্রী ও মেয়েরা খুব পর্দানশীল ছিল। তাই মুক্তারের বাড়িও তারা খুব একটা যেত না। বছরে দু-একবার যেত। ছেলের পরিবারটির সঙ্গে তাঁর তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। এ জন্য তাঁদের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
মুক্তার আলীর স্ত্রী শামীমা খাতুন (৩৫) বলেন, লোকমুখে তাঁরা শুনেছেন, বেলী বেগম অস্ত্র হাতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ জন্য তিনি বিশ্বাস করেছেন, পরিবারটি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। তা না হলে তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারতেন না। তাঁর স্বামী মুক্তার আলী কারো লাশ নেবেন না বলে জানান তিনি।