একদিনে খালেদা জিয়ার চার মামলার রায়-আদেশ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতে একই দিনে চার মামলার রায় ও আদেশ হয়েছে। এর মধ্যে নাইকো মামলা বাতিলে রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলায় খালেদা জিয়াকে আগামী দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, আজ বৃহস্পতিবার প্রথমে জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানির জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। সকাল সাড়ে ১০টায় দুটি মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রথমে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানি শুরু হলেও এ মামলার সাক্ষ্য বাতিলে হাইকোর্টে একটি আবেদন থাকায় এর কার্যক্রম মুলতবি রাখা হয়। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জেরা শুরু হয়ে তা ২৩ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
এদিকে, হরতাল-অবরোধে আগুনে পুড়ে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসনসহ চারজনের বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৭ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মারুফ হোসেনর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা ছিল।
এ মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর গুলশান কার্যালয়ে সারা দেশে অবরোধ পালনের সময় ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৪২ জন নিহত হন। এ ঘটনায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
নাইকো মামলার আদেশ ও মামলার বিবরণ : আজ বৃস্পতিবার বিচারপতি নুরুজ্জামান নোনী ও বিচাপরতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চবিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে মামলাটি নিম্ন আদালতে চলতে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন শুনানির পর এ মামলা রায়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়। মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার আহসানুর রহমান শুনানি করেন। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের ওপর রুলের শুনানি শেষে গত ২৮ মে রায় যেকোনো দিন দেওয়া হবে বলে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মামলার বিবরণে জানা যায়, কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতি সাধনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৩ জুলাই নির্ধারণ করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের আংশিক শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ দিন নির্ধারণ করেন। এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে এ শুনানি শুরু হয়।
আদালতে হাজির হয়ে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি ও পূর্বের সাক্ষ্য গ্রহণ বাতিলসহ দুটি আবেদন করেন খালেদা জিয়া। পরে আদালত তাঁর করা সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে লড়ছেন তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়।কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ২৫ মে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ বাতিলের জন্য করা আবেদন নাকচ করেন আদালত। একই সঙ্গে মামলা দুটির পরবর্তী শুনানির জন্য ১৮ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়।
বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নেওয়া ছয় কার্যদিবসে সাক্ষ্য গ্রহণ বাতিলের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, ১ ডিসেম্বর, ৮ ডিসেম্বর, ১৭ ডিসেম্বর এবং এ বছরের ৭ ও ১৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ সময় আদালত তা নাকচ করে দেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামের অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুদক।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তাঁর সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।