‘ড. ইউনূস পদ্মা সেতুর সমর্থক, বাধার প্রশ্নই আসে না’
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান ইউনূস সেন্টার থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারো কাছে কোনো বিবৃতি দেননি। আমরা প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে বাংলাদেশের খালাস পাওয়া এবং তার পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া আজকের এই প্রতিবাদপত্রে আরো বলা হয়েছে, ‘প্রফেসর ইউনূস ২০১১ সাল থেকে বহুবার এই মর্মে বলে এসেছেন যে, তিনি বরাবরই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন সমর্থক এবং এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে তাঁর বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।’
সম্প্রতি কানাডার একটি আদালতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তাকে খালাস দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিল, তা থেকে দায়মুক্তি পায় বাংলাদেশ।
এর পর থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে বক্তব্যে এ ঘটনার জন্য নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ইন্ধন’ ছিল বলে অভিযোগ করেন। তাঁরা এ ঘটনার জন্য বিশ্বব্যাংকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান, পাশাপাশি ড. ইউনূসের বিচার দাবি করেন। সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়।
এ প্রসঙ্গে গত ১২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কানাডার আদালত রায় দিয়েছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি। তাহলে ইউনূসসহ যাঁরা ওই ইস্যুকে পুঁজি করে দেশের ক্ষতি করলেন, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করলেন, তাঁদের কী হওয়া উচিত।’
‘‘এই বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ আমিও মনে করি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত’’, বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এর মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার ঢাকাস্থ ইউনূস সেন্টার ‘পদ্মা সেতু, কর ফাঁকি ও বিদেশে বেআইনিভাবে অর্থ প্রেরণ প্রসঙ্গে’ এই প্রতিবাদপত্র পাঠায়।
এতে আরো বলা হয়, ‘সম্প্রতি জাতীয় সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ বিষয়ে তাঁকে (ড. ইউনূসকে) অভিযুক্ত করার পর গত ২৮ জানুয়ারিসহ বহুবার তিনি এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন। আমরা আবারও তার পুনরাবৃত্তি করছি।’
‘ইউনূস কর সময়মতো পরিশোধ করেন’
ইউনূস সেন্টারের পাঠানো প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু সংক্রান্ত অভিযোগ ছাড়াও কয়েকটি পত্রিকা সূত্র উল্লেখ না করে এই মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রফেসর ইউনূসের ওপর ৬৯ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। এই তথ্যটিও সত্য নয়।’
ইউনূসের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো অনাদায়ী অর্থের দাবি নেই উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে এ মর্মে জানিয়েছি যে, প্রফেসর ইউনূস তাঁর সব কর পুরোপুরি ও সময়মতো পরিশোধ করে থাকেন। তাঁর আয় ও কর সংক্রান্ত সব তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আছে। তিনি তাঁর আইনগত অধিকার বলে সাম্প্রতিক কিছু কর দাবি সম্পর্কে, যা তাঁর নিকট অন্যায্য মনে হয়েছে, আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন এবং এ বিষয়ে আদালতের যেকোনো সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন।’