কেশবপুরে ক্লিনিক দখল নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৬
যশোরের কেশবপুরে ক্লিনিকের ভবন দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ সময় ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক জনকণ্ঠের কেশবপুর প্রতিনিধি কে এম কবির হোসেন।
আজ শুক্রবার সকালে এ সংঘর্ষের পর রাস্তা অবরোধের ঘটনাও ঘটে। সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ ও আহত সাংবাদিককে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হ হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর হাসপাতাল সংলগ্ন মডার্ন ক্লিনিকটির ভবনের মালিক মো. মুজিবর রহমান। সেখানে ক্লিনিক তৈরি করেন অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউল ইসলাম। তিনি দীর্ঘদিন ভবনের ভাড়া পরিশোধ না করায় গতকাল বৃহস্পতিবার ক্লিনিকে ‘ভাঙচুর’ করেন এবং ৩০ জন রোগীকে বের করে দেয় ভবনের মালিক মুজিবর ও তাঁর সহযোগীরা। পরে ক্লিনিকে তালাও ঝুলিয়ে দেন তিনি।
এরপর আজ সকাল ১০টার দিকে রবিউল দলবল নিয়ে ভবনের তালা ভাঙতে যান। এ সময় খবর পেয়ে মুজিবরের লোকজন সেখানে যান। সেখানে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ছবি তোলার সময় সাংবাদিক কবির হোসেনের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
খবর পেয়ে কেশবপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এ সময় থানার এসআই আবদুর রহমানসহ পাঁচজন আহত হন।
এ ঘটনার পর রবিউলের পক্ষে পরিবহন শ্রমিকরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেশবপুর ট্রাক টার্মিনালের কাছে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কে অবরোধ করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ওই পথে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে শ্রমিক নেতারা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সংবাদকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহরের শহীদ দৌলত বিশ্বাস চত্বরে সমাবেশ করা হয়। কেশবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফ-উজ-জামান খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসাইন, সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়দেব চক্রবর্তী প্রমুখ।
ভবনের মালিক মুজিবর রহমান জানান, তিনি বিদেশে থাকার সময় রবিউল ইসলাম ওই ভবনে মডার্ন ক্লিনিক গড়ে তোলেন। গত আট মাসে রবিউল ভবনের কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করায় পুলিশ দুই পক্ষকে ডেকেছিল। ওই বৈঠকের লিখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লিনিক মালিকের কাছে এ পর্যন্ত পাওনা ছয় লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। টাকা পরিশোধের পর ২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভবনটিও ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। তাই নির্ধারিত সময়ে ভবন না ছাড়ায় তিনি তালা লাগিয়ে দেন।
ক্লিনিক মালিক রবিউল ইসলাম জানান, কোনো নোটিশ ছাড়াই মুজিবর একদল সন্ত্রাসী নিয়ে ক্লিনিকে হামলা করেন। এ সময় ক্লিনিকের টিভি, চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটারসহ মালামাল ভাঙচুর করেন। পরে ৩০ জন রোগীকে বের করে ক্লিনিকে তালা দেওয়া হয়। ভবনের মালিকের কাছে অগ্রিম চার লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা পান বলে দাবি করেন তিনি।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম জানান, কী কারণে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে তা জানা নেই। যশোর থেকে শ্রমিক নেতারা সেখানে যাওয়ার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এখন পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো অভিযোগ পেলে মামলা করা হবে।