জনগণের সম্পৃক্ততাকে গৌণ ব্যাপার করা হয়েছে : সুলতানা কামাল
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত প্রকল্পগুলোতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। জনগণের সম্পৃক্ততাকে একেবারেই একটা গৌণ ব্যাপারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার জলবায়ু অর্থায়ন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান : প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আর দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশি ও বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল। ওই তহবিলের অর্থ কতটা জনগণের কথা বিবেচনা করে ব্যয় করা হচ্ছে, সেই বিষয়টি দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে টিআইবি ওই গবেষণায় এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রকল্পকে বেছে নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিতেই কমিউনিটি পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রভাব এমনকি চাহিদা নিরূপণ কিংবা বিপদাপন্নতা বিশ্লেষণ করা হয়নি। ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিতেই প্রকল্প প্রণয়নকালে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি।
আরো বলা হয়, পাঁচটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণ ছিল না। চারটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কমিউনিটি পর্যায়ে চাহিদা নিরূপণ ও বিপদাপন্নতা বিশ্লেষণ ছাড়াই প্রস্তাবনায় যেসব সমস্যা উল্লেখ করা হয় তার ভিত্তিতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকল্প কর্মসূচি করা হয় এবং বাজেট কমানো হয়। চারটি প্রকল্পে গতানুগতিক অবকাঠামো নির্মাণ; সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন করা হয়। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে তথ্যের উন্মুক্ততার ঘাটতি আছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, ‘এখন এমন একটা পরিস্থিতির সামনা সামনি আমরা দাঁড়িয়েছি, জনগণ কী চাইছে সেটা শোনার কোনো দায়দায়িত্ব সরকার সে রকমভাবে গুরুত্ব দিয়েই দেখতে চাইছে না।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যখন আমরা তহবিলের বরাদ্দটা (অ্যালোকেশন) দেখালাম তখন দেখা গেল বিপন্নতার সঙ্গে অসামঞ্জস্য বরাদ্দ। তার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা যখন আমরা করেছি তখন দেখা গেছে এ সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে প্রকল্পগুলোর মেরিটের ওপর ভিত্তি করে নয়, এটা সদস্যদের মধ্য থেকে বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়দের মধ্য থেকে কারা বেশি প্রভাবশালী, কতটুকু প্রভাববিস্তার করতে পেরেছেন তার ওপর নির্ভর করে বরাদ্দ হচ্ছে। এটি কাঙ্ক্ষিত নয়। ফলে যা হয়েছে তহবিলে যে মূল উদ্দেশ্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সেখানেই অর্থায়ন বেশি হবে, সেটাই হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান : প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এস এম জুয়েল এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমিন। ওই গবেষণায় আরো সংযুক্ত ছিলেন একই বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা রহমান ও গোলাম মহিউদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপনির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।