ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন, পরে তা গায়েব
ময়মনসিংহ জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে দুই কর্মচারীর কাছ থেকে ঘুষ ফেরত পেতে আবেদন করেছেন এক ব্যক্তি। তবে ঘুষ ফেরত না দিয়ে ওই আবেদপত্রটিই গায়েব করেছেন অপর এক কর্মচারী।
ওই তিন কর্মচারী সিন্ডিকেট করে জেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়ে ঘুষ নিয়ে লাইসেন্স বাণিজ্য শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এনামুল হক নামের ওই ব্যক্তি গত বছরের ২৭ আগস্ট ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, শহরের বাঘমারা এলাকায় ‘এনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এর মালিক গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে। এ সময় কার্যালয়ের টাইপিস্ট সুলতান উদ্দিন ও ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট মজিবুর রহমান দ্রুত কাজ করে দিতে ঘুষ চান। পরে তিনি দুই দফায় তাঁদের ৩০ হাজার দেন। কিন্তু লাইসেন্স দিতে পারেননি তাঁরা। পরে এনামুল নিজ উদ্যোগে মহাপরিচালকের দপ্তরে যোগাযোগ করে লাইসেন্স পান।
এনামুল হক বলেন, ‘লাইসেন্স পাওয়ার পর কয়েক দফা সুলতান উদ্দিনের কাছে ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে যাই। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করেন। পরে ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তদন্ত বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযোগপত্রটিই গায়েব করা হয়। সুলতান উদ্দিন ও দপ্তরের ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট মজিবুর রহমান এই অভিযোগপত্রটি গায়েব করে দেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে অভিযোগপত্রটি খুঁজতে গেলে প্রথমে তা পাওয়া যায়নি। অভিযোগপত্রটি তাঁদের অফিসের রেকর্ড থেকেই সরিয়ে ফেলা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা খোঁজার পর জানা যায়, অভিযোগপত্রটির রিসিভ কপিতে স্বাক্ষর করেছিলেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ইমরান মেহেদী হাসান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান মেহেদী হাসান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মোস্তফা কামালের নির্দেশে তিনি নিজেই অভিযোগপত্রটি গায়েব করেন।
অন্যদিকে সুলতান উদ্দিনের নিজেও ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ঢাকা অফিস থেকে ছাড়পত্র নিয়ে গত বছরের ২৭ জুলাই সুলতান উদ্দিন ময়মনসিংহ জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিসে যোগ দেন। এরপর সুলতান উদ্দিন, মজিবুর রহমান ও ইমরান মেহেদী হাসান মিলে শুরু করেন লাইসেন্স বাণিজ্য।