৩ কিশোর হত্যা : তত্ত্বাবধায়কসহ ৫ কর্মকর্তা রিমান্ডে
বন্দি তিন কিশোরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ (তত্ত্বাবধায়ক) পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ শনিবার বিকেলে পাঁচ আসামিদের যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মাহাদী হাসান শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পরিদর্শক রকিবুজ্জামান জানিয়েছেন।
রাতে তদন্ত কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তিনজনকে পাঁচ দিনের এবং বাকি দুজনকে তিন দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর মধ্যে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, প্রবেশন কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ ও সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। আর কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক ও শরীরচর্চা পরিদর্শক এ কে এম শাহানুর আলমের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
এর আগে আজ দুপুরে যশোর জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানিয়েছিলেন, তিন কিশোরকে হত্যার ঘটনায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের মোট ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শেষে তাঁদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহত হয়। ঘটনার ছয় ঘণ্টা পর কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, দুই দল কিশোরের মধ্যে সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় আরো কয়েকজন। যদিও পরে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কথিত সংঘর্ষের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে জানায়, কিশোরদের একতরফা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হাতপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরদের জবানিতেও উঠে এসেছে দিনভর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা। তারা অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতরা হলো খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল সুজন (১৮) ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)।
কিশোরদের ভাষ্যমতে, এ ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ আগস্ট। এদিন কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী নূর ইসলাম কয়েকজন কিশোরকে তার মাথার চুল কেটে দিতে বলেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই নিরাপত্তাকর্মী পরিচালকের কাছে কিশোরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন যে, তারা মাদকাসক্ত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বন্দিদের কয়েকজন নূর ইসলামকে মারপিট করে। তার পরই তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটি জেলা শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরের শহরতলী পুলেরহাট এলাকায় অবস্থিত। এখানে প্রায় ২৮০ জন কিশোর বন্দি রয়েছে। বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া।
এ দিকে গতকাল যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান জানান, এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছকে। কমিটির সদস্য সচিব সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন জেলা পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, যিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার নিচে নন। এ কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে একই বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মোহাম্মাদ নুরুল বসিরকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির অপর সদস্য হলেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এস এম মাহমুদুল্লাহ। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।