১৫ আগস্ট জাতির ললাটে কলঙ্ক তিলক এঁকে দিয়েছে
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘জাতির পিতার খুনিরা ১৫ আগস্ট জাতির ললাটে কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এ কলঙ্কের তিলক বয়ে বেড়াতে হবে। এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করে আমি বা আমরা রাজপথে নেমে আসি নাই- এটাই আমাদের লজ্জা। খুনিদের বিচার করে লজ্জার আংশিক মোচন হতে পারে, কিন্তু পরিপূর্ণ মোচন কখনই হতে পারে না।’
আজ শনিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দুদকের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ইকবাল মাহমুদ এ কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৪ আগস্ট আরামবাগের এক আত্মীয়র বাসায় ছিলাম। পরের দিন নতুন-জামা পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যাব- শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতাকে দ্বিতীয়বারের মতো দেখতে। হৃদয়ের গভীরে ছিল এক চরম উত্তেজনা। কিন্তু ঘাতকদের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের কারণে জাতির পিতাকে দ্বিতীয়বার দেখার সৌভাগ্য আর আমার জীবনে ঘটেনি। তাই আমি বলব, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক জাতির পিতাকে রক্ষা করতে না পারা এবং হত্যার পরে প্রতিবাদে রাজপথে নেমে না আসতে পারার লজ্জা আমাদের চিরদিন বহন করতে হবে।’
দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘১৯৯৪ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার এক প্রশিক্ষণে জাপান যাই। সেই প্রশিক্ষণের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনে জাপানি এক নারী কর্মকর্তা সবার সামনে আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনারা কীভাবে আপনাদের জাতির পিতাকে হত্যা করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর আমি সেদিন দিতে পারিনি। আজও এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। ১৭টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে সেদিন লজ্জিত হয়েছিলাম। সে লজ্জা আজও মোচন হয়নি।’
ইকবাল মাহমুদ আরো বলেন, ‘আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। যখনই আইন বা বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা হতো তখন দেখতাম সব আইন ও বিধি-বিধানের উৎস ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জাতির পিতার শাসনামলে প্রণয়ন করা। আজ যে আইনের ভিত্তিতে সমুদ্র বিজয় হয়েছে এই আইনও জাতির পিতার শাসনামলে করা। আমাদের অনুধাবন করতে হবে, কতটা দূরদর্শী নেতৃত্ব থাকলে জাতিসংঘে উপস্থাপন করা যায়- এমন একটি আইন তখনই প্রণয়ন করা হয়েছিল। বিস্ময়করভাবে আমরা দেখি আমাদের দেশের সব কর্মপ্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি জাজ্বল্যমান। সংবিধান থেকে শুরু করে বেশিরভাগ মৌলিক আইন ও বিধি-বিধান জাতির পিতার শাসনামলেই প্রণয়ন করা।’
দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাতির পিতা দেশের উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করে গেছেন। দেশকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছিল- সেসব ষড়যন্ত্রকারী এবং তাদের দোসররা হয়তো আজও সক্রিয়। রক্তপিপাসু ষড়যন্ত্রকারীদের কাজই দেশের অগ্রগতিতে বাধা দেওয়া।’
দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান জাতির পিতার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, “বঙ্গবন্ধু ৫৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে কখনো মুজিব ভাই, কখনো বঙ্গবন্ধু, কখনো জাতির পিতা হয়েছেন। জীবনের সিংহভাগ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। কারাগারকে তিনি লাইব্রেরি মনে করতেন। রাজনীতির এই মহান কবি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়েছেন। আমি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ভেবেছিলাম, এই খবরটি যেন মিথ্যা হয়; তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু খবরটি সত্য হয়। ‘রাত পোহালে যদি শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’- এই গানটির মধ্যে আমি আমার সেদিনের ভাবনাকে খুঁজে পাই।”
দুদকের প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. জহির রায়হানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দুদকের মহাপরিচালক আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ, এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, মো. রেজানুর রহমান, পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন প্রমুখ।
১৫ আগস্ট শহীদদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন দুদক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মফিজুর রহমান ভুঞা। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান, এ কে এম সোহেল, মো. জাকির হোসেনসহ পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা।