হেফাজতের তাণ্ডব নিয়ে বিএনপি একটি কথাও বলেনি : ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলাম দেশব্যাপী যে তাণ্ডব চালিয়েছে এবং জনগণ, তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদে আগুন দিয়েছে, তা নিয়ে বিএনপি একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি।’
সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের হেফাজতের মামলায় জড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করছে—বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) এই অভিযোগ গতানুগতিক এবং সত্য নয়।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে আজ মঙ্গলবার প্রকৌশলীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মতবিনিময় সভায় যুক্ত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতের সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘অপরাধী কোনো দলের হতে পারে না। ধর্ম কখনো সহিংসতাকে উসকে দেয় না। যারা ধর্মের নামে স্বার্থ হাসিলের নোংরা রাজনীতি করছে এবং সম্পদ নষ্ট করছে, তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ধরা হচ্ছে।’
সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে—এমন অভিযোগ সত্যের অপলাপ বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘মামলার আসামি এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া নেতাকর্মীদের কোথায় হয়রানি করা হচ্ছে, তার তালিকা দিন। ঢালাও অভিযোগ না করে স্পষ্ট প্রমাণ দিন।’
বিএনপিকে সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের কর্মীদের দমন করছে—বিএনপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের এসব কথা শুনলে জনগণ হাসে। তারা অপরাজনীতি ও মিথ্যাচারকে রাজনীতি মনে করছে।’ জনগণের কল্যাণ থেকে দূরে থেকে বিএনপি এখন সন্ত্রাস ও গুজবনির্ভর রাজনীতির চর্চা করছে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বিএনপিকে সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের পথ থেকে ফিরে জনকল্যাণমুখী ও ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার সরকার রাজনৈতিক নিপীড়নে বিশ্বাসী নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ সময় আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সব দল ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।’
এদিকে, অবকাঠামো নির্মাণকাজ করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য আরোপ করা বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং মাস্ক পরিধান করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সামনে বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগেই নির্মাণাধীন কাজ এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী জানান, বর্ষার আগে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল ১৪ তারিখ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে সড়কে গণপরিবহণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাস্তা ফাঁকা থাকবে। তাই এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করতে হবে।’
সামনে যেসব প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে, তার পেপারওয়ার্ক এখনই শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুকনো মৌসুম এলেই যেন নির্মাণকাজ শুরু করা যায়। কয়েক বছরে সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কাজ আরও এগিয়ে নিতে হবে।’ এ সময় ঢাকা-কক্সবাজার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন তিনি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই প্রকল্প সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। তাই এই প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকলেও সম্প্রতি গতি পেয়েছে।’ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে বা কাজ শুরু হওয়ার আগে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই দেশের মানুষের সুরক্ষায় সংক্রমণ রোধে শেখ হাসিনার সরকার যে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমাদের জীবনের সুরক্ষার স্বার্থেই।’
ওবায়দুল কাদের বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজনীতি জনগণের জন্য। করোনা দল চেনে না। সবাই এই ভাইরাসের শিকার হতে পারে। সুতরাং করোনা নিয়ে রাজনীতি না করে সরকারকে প্রয়োজনে গঠনমূলক পরামর্শ দিন।’
করোনা মহামারি থেকে উত্তরণে সবাইকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং স্রষ্টার অপার কৃপায় নিশ্চয়ই আমরা সবাই এ সংকট কাটিয়ে উঠব ইনশাআল্লাহ।’