সড়কে মা-বাবাকে হারিয়ে শূন্য দৃষ্টি দুই মেয়ের
দুই মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সুখেই কাটছিল ইয়াসমিন বেগমের সাজানো সংসার। প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালেও সংসারের যাবতীয় কাজ শেষে তাঁর স্বামী হুমায়ূন কবির ভূঁইয়ার সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কর্মস্থলে আর যাওয়া হয়নি ইয়াসমিনের। পথেই নিভে গেল জীবনপ্রদীপ। দুই মেয়েকে ফেলে স্বামী-স্ত্রী দুজনই পাড়ি জমালেন পরপারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জ সদরের মুলজান এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন হুমায়ূন কবির। ওই সময় গুরুতর আহত হন ইয়াসমিন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর তখনই যেন দুই মেয়ে শোভা ও ইভার জীবনের ছায়া, আশ্রয় আর মায়া-মমতা সব নিমেষেই শেষ হয়ে গেল।
নিহত হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া (৪০) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের চরগড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে চাকরি করতেন তিনি।
অন্যদিকে, ইয়াসমিন বেগম (৩৮) সাভারের নবীনগরের পলাশবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। তিনি মুলজান পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিলিং সেক্টরে কর্মরত ছিলেন।
এ দম্পতির বড় মেয়ে শোভা (১৫) নবম শ্রেণির ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে ইভা (১২) পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তাঁরা দুজনই জেলার এস কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।
মা-বাবার জানাজার আগে তাঁদের শেষবার দেখতে গিয়েছিল শোভা ও ইভা। তখন চোখে-মুখে শূন্য দৃষ্টি তাদের। শোভা শুধু ‘বাবা, বাবা, ও বাবা, বাবাগো’ বলে আর্তনাদ করছিল। তাঁর কান্না আর আর্তনাদে জানাজার স্থান গড়পাড়া ফুটবল খেলার মাঠ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল।
বাদ আসর গড়পাড়ার হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে হুমায়ূন ও ইয়াসমিনের জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর স্থানীয় কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়। দাফন শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে থাকে সবাই। শুধু মা-বাবার শেষ যাত্রার পথ চেয়ে থাকে দুই মেয়ে।