‘স্যার কাঁপতাছি! চাইলাম কম্বল দিল বস্তা’
‘স্যার শীতে কাঁপতাছি। কেউ একখান কম্বল দিল না। কালকে একজনে কম্বল দিছিল। চাইলাম কম্বল; দিল বস্তা। এইডা এখন শীতের সম্বল।’
রাজধানীর হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে এভাবে কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন আসমা বেগম।
আজ শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে হাইকোর্টের মাজার গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কনকনে শীতের মধ্যে কয়েক টুকরো কাঠে আগুন জ্বালিয়ে সন্তানকে নিয়ে বসে ঝিমাচ্ছিলেন মেহেদী। পাশে বসে তাঁর স্ত্রী আসমা আগুনে দুই একটি নতুন কাঠ দিচ্ছেন। এ সময় মেহেদী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভাই আমার গ্রামের বাড়ী ভোলা। নদী ভাঙ্গনে দেশের বাড়ী ঘর সব নিয়ে গেছে। এখানেও কাজকর্ম নেই। মাঝে মধ্যে বিয়ে বাড়ীতে কাজ করি। তাই এখানে ফুটপাতে ঘুমাই।’ শীতে কীভাবে ঘুমান জানতে চাইলে বলেন, ‘যেই ঠাণ্ডা,এর মইধ্যে আবার ঘুম!’ শীতের কোনো কিছুই নেই। দুইটা সন্তানকে নিয়ে অনেক কস্টে আছি। নিয়মিত কাজ না থাকায় ঠিকমতো খাইতেও পারিনা।’
পাশে থাকা তার স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘গতকাল একজন আইছিলো কম্বল নিয়া। জোর কইরা অনেকে নিয়ে গেছে। আমি কম্বল চাইলাম আমারে কম্বল না দিয়া বস্তা দিয়া গেছে। এটাই সম্বল। এটা বিছাইয়া, গায়ে দিয়ে রাতে ঘুমাতে হয়। সাইমুম, রিয়া মনি নামে দুইটা সন্তান আছে। এদের নিয়া অনেক কষ্ট করতাছি।’
এ সময় সাইমুম নামে ৮ বছরের ছেলে বলেন, ‘স্যার আমারে একটা কম্বল দিবেন। আমি রাতে ঘুমাব।’ অপর শিশু রিয়া মনি বলেন, ‘আমরা রাইতে ঘুমাইতে পারি না। আমাদের ছবি তুলেন। কেউ যদি একটা কম্বল দেয়।’
এরপাশে দেখা যায়, অনেক পুরুষ মহিলা বসে আছে। তাদের কাছে শীতের কোনো কিছুই নেই। মাজার গেটের ফুটপাতে বয়স প্রায় ৯০ পার করা রহিমা খাতুন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কনকনে ঠাণ্ডায় কাঁপছিলেন আর আর্তনাদ করছেন। পাশে বসে থাকা মেয়ে জরিনা খাতুন মাকে ধরে বসে আছেন। জরিনা খাতুন বলেন,‘এতো ঠাণ্ডার মইধ্যে নিজেরাই ঠিক থাকতে পারি না। আর এই বুড়ি কেমনে ঠিক থাকব? একটা পাতলা কম্বল পাইছি সেটা দিয়া মুড়াইয়া সামনে আগুন জ্বালাইয়া বইসা আছি।’ তিনি জানান, শীতের সময় সাধারণত তাদের রাতের বেলা ঘুমানো হয় না। দিনের অপেক্ষায় কোনোমতে রাত কাটে।
শীতে ঘুম আসছে না জানিয়ে রানা খান জানান,বিক্রমপুরে তাঁর বাড়ী। স্ত্রী মারা গেছে। একটা মেয়ে আছে। খোঁজ নেয় না। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের মাজারে দুপুরে খাই। সকালে বা রাতে কখনো খাই কখনো না খাইয়া ঘুমাই।’
আবু রায়হান বলেন, ‘আমার বাড়ী চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে। এইবার এহনই এতো শীত পড়ছে,সামনে যে আরো কত দুর্গতি আছে,আল্লায় জানে! ঠাণ্ডা পড়লে খোলা জায়গায় থাহন যায় না’। কোথাও কাজ কর্ম নেই। হোটেলে বা দোকানে কাজ চাইলে সিটিউরিট চায়। না হয় পরিচিতি কারো জামিনদার চায়। পরিচিত কেউ না থাকায় কাজ পাচ্ছি না। সকাল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মাজারের এখানে থাকি। রাতে স্টেডিয়ামে ঘুমাই। বাড়ীতে দুই-মেয়ে আছে। টাকা পয়সা দিতে পারিনা। তারাও বহু কস্টে আছে। ভাই এহানে ঘুমাতে পারি না। একটা কম্বল হলে শীতটা পার করে দিতে পারতাম।’