স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতার জীবন কাটছে কষ্টে
১৬ নভেম্বর ২০১৯। মীরসরাইয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড়। দর্শকসারির এক কোণায় বসে ছিলেন মোতাহার হোসেন রানা। পরনের লুঙ্গি আর শার্টটা ছেঁড়া। তবে গলায় ঝুলেছে কাউন্সিলরের কার্ড।
এই মোতাহার হোসেন রানা ৯০-এর গণআন্দোলনের ছাত্রনেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এই নেতা ছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মিছিলের সামনের সারিতে। অথচ মীরসরাই উপজেলার সম্মেলনেও মঞ্চে জায়গা হয়নি তাঁর!
রানার সেদিনের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সাবেক ও বর্তমান নেতাদের অনেকই ছবিটি নিয়ে নিজের মতো করে লিখেছেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগ লেখায় ছিল হতাশা আর রানার প্রতি ভালোবাসা।
ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোতাহার হোসেন রানা ছাত্রলীগের মাঠ কাঁপানো নেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ১৯৯০-৯১ সেশনে অনুষ্ঠিত হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তিনি কবি জসিমউদ্দিন হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত নেতা ছিলেন।
রানা দক্ষ সংগঠক, সাহসী মুজিব সৈনিক, পরিশ্রমী ছাত্রনেতা এবং সুবক্তা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তিনি পাঁচ মিনিট বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য শুনে শেখ হাসিনা এত খুশি হয়েছিলেন যে, রানার ঠিকানা মঞ্চে সবার সামনে ডায়েরিতে টুকে নিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালে মীরসরাইয়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন মোতাহার হোসেন রানা। ট্রাকের ধাক্কায় তিনি মাথায় আঘাত পান। তাঁর মাথা থেতলে যায়। তৎকালীন পিজি হাসপাতালের (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) বিখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক রশিদ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে তাঁর। অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া তখন জুনিয়র নিউরোসার্জন হিসেবে দেখভাল করেন। মৃতপ্রায় রানা চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুটা সেরে উঠলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হননি। সেই থেকেই অসুস্থ জীবনের ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায় মোতাহের হোসেন রানার বাড়ি। সেখানেই তিনি স্ত্রী ও ৬ ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ২০০৩ সালের শেষের দিকে ধানমণ্ডি ৩/এ আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে কাজ পেয়েছিলেন রানা। কিন্তু ওই কাজের জন্য তাঁর শরীর উপযুক্ত না থাকায় তিনি গ্রামে ফিরে যান। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সহায়তা পেয়েছেন বরাবরই। বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভাতা পান তিনি। তবে ওই ভাতায় সংসার ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে কষ্ট হয় তাঁর।
মোতাহার হোসেন রানার সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। নিজের কথা বলে কেবলই কাঁদছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমার আরো চিকিৎসার দরকার। দেশে বা দেশের বাইরে নিয়ে যেন আমার চিকিৎসা হয়, আমার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা যেন তিনি করে দেন।’
মোতাহার হোসেন রানার বড় ছেলে আবদুস শামীম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাবা খুবই অসুস্থ। তাঁর ভালো চিকিৎসার দরকার। আমরা ছয় ভাই বোন । আমি পলিটেনিক্যাল কলেজে পড়ি। এক ভাই কলেজে আরেক ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এক বোন পঞ্চম শ্রেণিতে, আরেক বোন দ্বিতীয় আর একজনের বয়স পাঁচ বছর।